শীতকালীন বাচ্চাদের অসুখ বিসুখ – ডাঃ বেলায়েত হোসেন ঢালী
ডায়রিয়া: শীতে বাচ্চাদের ডায়রিয়ার প্রকোপ খুব বেশি।শীতকালীন ডায়রিয়ার কারন মূলত রোটাভাইরাস। ডায়রিয়া হলে শিশুকে ঘন ঘন বুকের দুধ ও ওরস্যালাইন খেতে দিন।পাশাপাশি ৬ মাসের অধিক বয়সের বাচ্চাদেরকে পরিবারের স্বাভাবিক খাবারও খেতে দিন। ডায়রিয়ার চিকিৎসায় ঔষধের খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না।
তবে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি খেয়াল করতে হয় তা হল ওরস্যালাইন তৈরি করা এবং খাওয়ানোর সঠিক নিয়ম মেনে চলা।আর নিয়ম না মানলেই যত বিপত্তি।
সঠিক নিয়মে ওরস্যালাইন না বানানো এবং তা বাচ্চাকে খাওয়ানোর কারনে প্রতিদিনই শিশুরা হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে কিংবা শিশু আইসিইউতে ভর্তি হচ্ছে Hypernatremic dehydration ( হাইপারনেট্রেমিক ডিহাইড্রেশন) নিয়ে।
Hypernatremic dehydration (হাইপারনেট্রেমিক ডিহাইড্রেশন) কি?
শিশুদের ডায়রিয়া হলে ঘন করে ওরস্যালাইন খাওয়ানো হলে শিশুদের যে সকল মারাত্মক উপসর্গ দেখা দেয় সেটাকেই hypernatremic dehydration বলে। আমাদের অভিভাবকরা বুঝতেই পারছেন না, বাচ্চাকে বাঁচাতে গিয়ে সঠিক পদ্ধতিতে ওরস্যালাইন তৈরি না করে সেটা খাইয়ে দিয়ে নিজেরাই বাচ্চাকে সরাসরি মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছেন!!
ঘন করে ওরস্যালাইন খাওয়ানোর জন্য শিশুর খিঁচুনি, কিডনি অকেজো থেকে শুরু করে, শিশুর করুণ অকাল মৃত্যু পর্যন্ত ঘটছে!! কিন্তু একটু সতর্ক হলেই এই ভয়ানক অভিজ্ঞতা থেকে আমরা সবাই রেহাই পেতে পারি।
শুধু ওরস্যালাইনটা একটু সঠিক পদ্ধতিতে বানালেই হবে। আধা লিটার পানিতে একটা ওরস্যালাইন, আধা লিটার মানে আধা লিটার (৫০০ মিলি)!! কোনো প্রকার মাপের ঝামেলায় না গিয়ে আধালিটারের একটি পানির বোতল নিয়ে পুরো বোতলের পানিতে একটা ওরস্যালাইনের প্যাকেটের সম্পূর্নটা গুলিয়ে নিলেই তা সঠিক পদ্ধতিতে খাবারের স্যালাইন তৈরি হয়ে যাবে। যে ভুলটা আমরা করছি, আমরা নিজেদের মত করে আধা লিটার হিসাব করে স্যালাইনটা বানিয়ে ফেলছি। কেউ কাপে, কেউ মগে, কেউ গ্লাসে, কেউ সিরাপের কৌটায় একটু একটু করে স্যালাইন বানিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছি। তাতেই সর্বনাশ টা হচ্ছে!!
তাই আসুন আমরা সতর্ক হই, সঠিক ভাবে ওরস্যালাইন টা বানিয়ে শিশুর ডায়রিয়ার সময় শিশুকে খেতে দিই…..।নিজে সতর্ক হই এবং অপরকেও সতর্ক করি।
ডাক্তার হিসেবে আমাদের করণীয় কি?
আমরা যখন কোন ডায়রিয়ার বাচ্চাকে চিকিৎসা দিতে যাব,অবশ্যই কিভাবে খাবার স্যালাইন বানাতে হয় এবং কতটুকু পরিমান খাওয়াতে হবে কিংবা কিভাবে খাওয়াতে হবে তা অভিভাবকদেরকে আমাদেরই শিখিয়ে দিতে হবে।অথবা অভিভাবকরা কিভাবে খাবারের স্যালাইন বানাচ্ছেন সেটা একটু জেনে নিতে হবে।মনে রাখতে হবে এটা চিকিৎসারই অংশ।যদি আমরা নিজেরা সচেতন না হই কিংবা অভিভাবকদেরকে সচেতন না করি তাহলে হাইপারনেট্রেমিক ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ সম্ভব নয়।
# তবে আরেকটি ব্যাপার যা না বললেই নয়।কম পানিতে ওরস্যালাইন বানানো যেমন ক্ষতিকর তদ্রুপ নির্ধারিত মাপের বেশি পানিতে ওরস্যালাইন বানানোও তেমনি ক্ষতিকর। বেশি পানিতে (৫০০ মিলি র বেশি) ওরস্যালাইন বানালে Hyponatremic dehydration (হাইপোনেট্রেমিক ডিহাইড্রেশন) হয়।আর তাতেও বাচ্চার মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি হয়।
প্রতিরোধ: ১. বাচ্চাকে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ান। ৬ মাসের পর হতে ২ বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধের পাশাপাশি পরিবারের অন্যান্য স্বাভাবিক খাবার খাবার খাওয়াবেন।
২. বাচ্চাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
৩. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে বাচ্চার খাবার পরিবেশন করুন।
৪. বাচ্চাকে নিয়মিত টিকা দিন।
৫. দুই বছরের অধিক বয়সের বাচ্চাদেরকে নিয়মিত প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর চিকিৎসকেরর পরামর্শ অনুযায়ী কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়াবেন।
৬. বাচ্চাকে চিপস,চকোলেট,জুস,আচার,আইসক্রীম প্রভৃতি খেতে দেবেন না।
৭.দেড় মাস বয়স হতে ৬ মাস বয়সের মধ্যে ২ ডোজ রোটাভাইরাস টিকা খাওয়াবেন।তবে প্রথম ডোজ অবশ্যই ৩ মাস বয়সের মধ্যে খাওয়াতে হবে।
ডা.বেলায়েত হোসেন ঢালী
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
শেভরন ক্লিনিকাল ল্যাব (রুম নং ৬১৪)
পাঁচলাইশ, চট্রগ্রাম।