দীর্ঘ ক্ষন চেয়ারে বসে থাকা কি আপনাকে চরম সমস্যায় ফেলছে?

সামনে ঝুঁকে বসার বিপদ

জীবন জিবিকার প্রয়জনে আমাদের অনেক কেই অফিস বা ব্যাবসা ক্ষেত্রে দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে থাকতে হয়। এই চেয়ারে বসে থাকার দরুন আমাদের ভুগতে হয় অনেক সমস্যায়। তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর ও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হল কোমর ব্যাথা ও ঘাড়ে ব্যাথা। ডেস্ক জব করেন, কিন্তু কোমর বা ঘাড়ে ব্যাথা হয়নি এমন মানুষ খুজে পাওয়া দুষ্কর। অনেকের জন্য এটা একটা অভিশাপের মত হয়ে দেখা দেয়, কারন, এই সমস্যার জন্য অনেকে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হন।

আজকে আমরা আলোচনা করব, এই ধরনের বসে থাকার জন্য যে কোমর বা ঘাড়ে ব্যাথা হয়, তার কারন, প্রথম ক্ষেত্রেই যাতে এটা না আসে তা কিভাবে নিশ্চিত করা যায় এবং পরিশেষে ব্যাথা যদি চলেই আসে তাহলে এর প্রতিকার নিয়ে।

স্বাভাবিক ভাবেই আমরা যখন চেয়ারে বসি তখন আমরা কিছুটা সামনের দিকে ঝুঁকে বসি। আমাদের কোমরের যে মেরুদণ্ড আছে, তা কিন্তু সরল রেখার মত সমান বা সোজা নয়। মেরুদণ্ড অনেক গুল ছোট হাড়ের সমন্নয়ে তৈরি। এই হাড় গুলর মাঝখানে আবার রয়েছে নরম জেলির মত ডিস্ক যা হাড় গুলর মধ্যে ঝাঁকুনি প্রতিহত করে ও পুরো মেরুদণ্ড কে ফ্লেক্সিবল করে।

আমরা যখন দীর্ঘক্ষণ সামনের দিকে ঝুঁকে বসে তাকি, তখন আমাদের মেরুদণ্ডের এই ডিস্ক গুল তে অনেক চাপ পরে, সেই সাথে চাপ পরে মেরুদণ্ডের আসে পাশের মাংশ পেশি ও লিগামেন্ট এর উপর। ডিস্ক গুল যেহেতু নরম, তারা এই অস্বাভাবিক চাপ এর দরুন আস্তে আস্তে স্ফিত হয়ে মেরুদণ্ডের ভেতর থেকে শরীরের বিভিন্ন দিকে যে নার্ভ গুল চলে যাই, তাদের গায়ে চাপ দেয়। এর কারনে আমরা ব্যাথা অনুভব করি। এই চাপের তারতম্য বা তীব্রতার ওপর ব্যাথার ধরন নির্ভর করে। চাপ যত বেশি হবে, ব্যাথার তীব্রতা ও তত বেশি হবে, সেই সাথে কোমর থেকে ব্যাথা তত দূরে ছড়িয়ে পরবে। অনেক সময় এই ব্যাথা পায়ে ও অনুভূত হতে পারে।

সামনে ঝুঁকে বসার বিপদ এই ভাবে সোজা হয়ে বসতে হবে

এখন এই ধরনের ব্যথা থেকে নিজেকে কিভাবে রক্ষা করবেন তা নিয়ে আলোচনা করব। উন্নত দেশ গুল তে প্রতিষ্ঠানগুলো তার কর্মী দের এ ধরনের সমস্যা থেকে রক্ষা করার জন্য বিশেষ ধরনের অ্যাডজাস্টেবল চেয়ার বেবস্থা করে থাকে, যা মেরুদণ্ডের আকৃতি ঠিক রেখে বসতে সাহায্য করে। তবে বাংলাদেশে এই গুল সহজ লভ্য নয়, অথবা প্রতিষ্ঠান গুল এই ব্যয় বহন করতে সমর্থ নয়। তবে সাধারন চেয়ারে কিছু বিশেষ ধরনের কুশন ব্যাবহার করে মেরুদণ্ড কে সোজা রেখে কোমর ও ঘাড় ব্যাথা থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ও চেয়ার টি যতোটা সম্ভব নিচের ছবির মত করে সেট করে নিলে অনেক সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

এখন আলোচনা করব, যাদের কোমর অতবা ঘাড়ে ব্যাথা চলে এসেছে তারা কি করবেন। প্রথম কথা হল, কোন ভাবেই সামনে ঝুঁকে বসা যাবে না। সামনে ঝুকা বন্ধ করতে চাইলে ও অনেক সময় কাজের চাপে আমাদের মনে থাকে না সোজা হয়ে বসার কথা। এর জন্য আমরা একটি বিশেষ কুশন চেয়ারের সাথে ব্যাবহার করতে পারি। এগুলকে বলা হয় লাম্বার রোল। নিচের ছবর মত করে এগুল ব্যাবহার করলে আপনার কোমর পানা থেকেই সোজা থাকবে। আপনি যখনি সামনে ঝুঁকে বসতে চাইবেন, এই লাম্বার রোল আপ্নাকে বাধা দিবে।

চেষ্টা করবেন ২-৩ ঘণ্টা বসে কাজ করার পর ১০-১৫ মিনিট এর জন্য হালকা হাটা ছলা করে নিতে। অনেক সময় ব্যাথা বেশি হয়ে গেলে আপনাকে ফিজিওথেরাপিস্ট এর সরনাপন্ন হতে হবে। তিনি আপনার সমস্যা এর কারন ও ধরন দেখে আপনাকে বিভিন্ন থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ (সাধারন এক্সারসাইজ নয়) দেবেন, যাতে আপনার মেরুদণ্ডের ডিস্ক গুল আগের জায়গায় ফিরে আসে। প্রয়োজন হলে মেরুদণ্ডের হাড়ে বিশেষ ধরনের ম্যানিপুলেশন (হাই ভেলসিটি, লো-আমপ্লিচ্যুড থ্রাস্ট) এর মাধ্যমে ডিস্ক গুলকে পূর্বের অবস্থানে নিয়ে আসা হয়, তবে এর জন্য ম্যানিপুলেটিভ ফিজিওথেরাপিতে দক্ষ একজন এর কাছ থেকেই এটা গ্রহন করতে হবে।

শেষ কথা হচ্ছে, বেশিদিন কর্মক্ষম থাকে হলে আমাদের অবশ্যই সামনে ঝুঁকে বসে কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সবসময় কোমরের স্বাভাবিক বক্রতা বজায় রেখে বসতে হবে। প্রয়জনে লাম্বার রোল ব্যাবহার করতে হবে যাতে ব্যাথার উতপত্তিই না হয়।

 

ডাঃ ওসমান গনি
এম, এস, সি (নিউরো রিহ্যাব, ব্রিটেন)
ডিপ্লোমা, অর্থপেডিক মেডিসিন (বেলজিয়াম)
বি, পি, টি (ডি, ইউ)
নিউরো রিহ্যাব ও পেইন স্পেশালিষ্ট ফিজিওথেরাপিস্ট।
01931405986

Related posts

Leave a Comment