ঈদের আহার

আজ ঈদুল আযহা, কোরবানির ঈদ। খুশির দিনে রকমারি খাবার তো সকলেই চাই, একদিন না হয় বাধ ভেঙ্গে ভোজন চলুক, তবে কিছু বিষয় খেয়াল রেখে ভোজনে মাতলে শরীরের জন্য ভালো হয়।

খাবার নিয়ে সমস্যা শুরু হয় মূলত ৪০ এর পর থেকেই। অপেক্ষাকৃত তরুণদের মেনে বেছে খাওয়া তেমন প্রয়োজন পড়ে না যদিও এখন বলা হচ্ছে তরুনদেরও খাবার নিয়ে সচেতন হতে।

ঈদে গরু, খাসীর সাথে ফ্রি হিসেবে আমরা পাচ্ছি তেল-চর্বি। রান্নায় তেল-চর্বি না থাকলে স্বাদ যেমন আসেনা তেমনি তেল-চর্বির কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বেড়ে যায় বহুগুণে। উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগে যারা আক্রান্ত তাদের জন্য গরু-খাশির ফ্যাট এককথায় হারাম। রান্নার পরে উপরে যে তেল টা ভাসতে থাকে সেটা ফেলে দিয়ে শুধু মাংসটুকু খেতে হবে। দৃশ্যমান সাদা বা হলদে চর্বি ফেলে দিন। রান্না করা মাংস রেখে দিলে জমাট বেঁধে যে অংশটুকু উপরের দিকে থাকে সেটা পুরোটাই ফ্যাট। এই অংশটুকু ফেলে দিন। যারা কিডনির সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য দৈনিক মাংশের পরিমাণ ডাক্তার নির্ধারণ করে দেন। ঈদের সময় এসব ক্ষেত্রে একটু কস্ট হলেও ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

মগজ, কলিজা এগুলো যেমন সুস্বাদু তেমনি কোলেস্টেরলে সমৃদ্ধ। তরুণদের জন্য সমস্যা না হলেও বয়স্করা কলিজা, মগজ, হাড়ের মজ্জা এসব পরিহার করুন।

ঈদে অনেক বাসাতেই বিভিন্ন রকম কাবাব তৈরি করা হবে, কাবাবের একটা সুবিধা হচ্ছে ঝলসানোর কারণে রান্না মাংসের থেকে কাবাবে চর্বির পরিমাণ কমে যায়। তাই একআধটু কাবাব খেতে পারেন। খেয়াল রাখবেন কাবাবের মাংস যেনো অর্ধসিদ্ধ না থাকে, না হলে ফিতা কৃমির একটা ভয় থেকে যায়।

ঈদের রান্নায় ঘি অপরিহার্য কিন্তু এই ঘি ব্যবহারেও শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়বে। কোরমা, পোলাওয়ে ঘি না দিলেই নয়। যারা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন তারা ঈদের পরের দিন থেকেই স্বাভাবিক খাবারে ফিরে আসুন।

যেহেতু ঈদের সময় মেনুতে সবজীর কোন স্থান থাকবে না তাই সালাদের সাথে যোগ করতে পারেন অতিরিক্ত সবজী। ফ্রুটস এন্ড ভেজিটেবল সালাদ রাখুন মেনুতে।

খাবার পরে কোল্ড ড্রিঙ্কসের বদলে দই নিয়ে আসুন। সাথে রাখুন বোরহানি, লাবাং, মাঠা ইত্যাদি পানীয়। কোল্ড ড্রিঙ্কসের থেকে এগুলো অনেক ভালো পানীয়। দই মাংসের কোলেস্টেরলকে শরীরে শোষিত হতে বাধা দেয়। ফলে ভুরিভোজের পরে টক বা মিস্ট দই খাওয়া খুব ভালো একটা বিষয়।

বদহজম আর কোষ্ঠবদ্ধতা সাধারণ সমস্যা ঈদের সময়ে। বদহজম হলে এন্টাসিড জাতীয় ট্যাবলেট খেতে পারেন। কোষ্ঠবদ্ধতার জন্য ঘরে রাখুন ইসবগুলের ভুশি, প্রয়োজনে মাংসের পরিমাণ কমিয়ে দিন। পান করুন প্রচুর পানি। হাতের কাছে কয়েক প্যাকেট ওরস্যালাইন রাখতে ভুলবেন না। অনেকের গরুর মাংসে এলার্জি আছে, তারা ঈদের সময় হাতের কাছে অ্যালার্জির ওষুধ সাথে রাখুন।

ঈদের সময় খাবারে এক আধটু এদিক সেদিক হতেই পারে, দুই একদিন ভারী খাবার চলতেই পারে। মূল কথা হচ্ছে খেতে হবে নিজের শরীর ও বয়সের গুরুত্ব বুঝে। সুস্থ্য দেহে সতেজ মনে উৎসবের আমেজে মাতুন পরিবারের সবাইকে নিয়ে। ঈদ মোবারক।

 

ডাঃ রায়হান কবীর খান

Related posts

Leave a Comment