প্রিয় পাঠক, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী পুরো পাতাজুড়ে আপনার শিশুর সমস্যা নিয়ে পরামর্শদিয়েছেন দেশের খ্যাতনামা শিশুবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম কিউ কে তালুকদার।অনেক চিঠি পেয়েছি। একই ধরনের সমস্যাগুলো পুনরাবৃত্তি না করে যথাসম্ভব বেশি চিঠির উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের আয়োজন থাকবে—স্বাস্থ্যকুশল-এ।
অধ্যাপক তালুকদারের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডা. ইকবাল কবীর
সমস্যা: আমার বাচ্চার বয়স ১৫ মাস। সে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে ও কথা বলতে পারে। মাঝেমধ্যে সর্দিতে আক্রান্ত হয় আবার ভালো হয়ে যায়। সমস্যা হলো, বাচ্চার মাথা বেশ গরম থাকে ও প্রায় সময় তার মাথায় দুই হাত দিয়ে সে আঘাত করে (থাপড় দেয়)। পরবর্তী সময় এই আঘাতের ফলে কি কোনো সমস্যা হবে। পরামর্শ দিলে উপকৃত হব।
সালমা আনোয়ার, দিনাজপুর।
পরামর্শ: কোনো কোনো সময় শিশু এমন করতে পারে। মাথায় হাত দিয়ে আঘাত করতে পারে। বুকের দুধ খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির সব রকম খাবার খাওয়াতে উৎসাহ দিন। জোর করে খাওয়াবেন না। মাথা যেন কখনো দেয়ালে আঘাত না করে। সেদিকে খেয়াল রাখবেন। যদি দেয়ালে আঘাত করার প্রবণতা দেখেন তবে শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
সমস্যা: আমার ছেলের জন্ম ২০০৩ সালের ১৭ আগস্ট। আগ্রহ করে কোনো কিছুই খেতে চায় না। না খেয়ে খেয়ে শুকিয়ে পাটকাঠির মতো স্বাস্থ্য। গত এপ্রিলের এক রাতে পেটব্যথার সঙ্গে প্রচণ্ড জ্বর আসে তার। স্থানীয় শিশুবিশেষজ্ঞ এস এ ফারুককে দেখালে রক্ত পরীক্ষায় টাইফয়েড ধরা পড়ে। ওষুধ চলছে, অসুস্থতাও নেই আর। জনশ্রুতি আছে, টাইফয়েডে নাকি নানা রকম শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। এ ব্যাপারে অনুরোধ করব, আমার ছেলেকে স্বাস্থ্য রক্ষায় খাদ্যগ্রহণে আগ্রহী হওয়ার পরামর্শ দিতে।
রোজিনা ইব্রাহীম
বারইয়ারহাট, মিরসরাই, চট্টগ্রাম।
পরামর্শ: বর্তমানে টাইফয়েড চিকিৎসার পরে শরীরে অন্য কোনো জটিলতা দেখা যায় না। রুচি হওয়ার জন্য এবং শরীর বৃদ্ধির জন্য কোনো ওষুধ নেই। বাড়ির হাঁড়ির ঘরের খাবার ডাল, ভাত, সবজি, মাছ, মাংস, ফলমুল ওর রুচিমতো খাওয়ার জন্য উৎসাহ দিন। খাওয়ার ব্যাপারে জোর করবেন না। এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।
সমস্যা: আমার বাচ্চার বয়স দুই মাস পাঁচ দিন। গর্ভাবস্থায় আমার পানি ভাঙার কারণে আট মাসে অস্ত্রোপচারে ওর জন্ম হয়। ওর ওজন তিন কেজি। জন্মের প্রায় দুই সপ্তাহ পর থেকে ওর পিঠের ওপরে কিছু জায়গা লাল ছোট ফোড়ার মতো হয়ে আছে। চিকিৎসক বলেছেন, একটু বড় হলে এটি আস্তে আস্তে ছোট হয়ে যাবে। ওর নাভি প্রথমে ছোট ছিল। জন্মের এক মাস পর থেকে নাভি বড় হতে থাকে। এখন আর বড় হচ্ছে না, ছোটও হচ্ছে না। খুব বেশি বড় নয়। ওর পায়খানা জন্মের পর থেকে ভালোভাবে হয়নি। দিনে একবার। একবার অনেক বেশি, একবার অনেক কম। খুব দুর্গন্ধযুক্ত বায়ু আসে। প্রস্রাব দিনে ২০-২৫ বার করে। এমনিতে ও সুস্থ। এক মাসের মধ্যে তিনবার পাতলা পায়খানা হয়। শিশু হাসপাতালে ছিলাম তিন দিন। তখন দিনে ৫০ বারের মতো পায়খানা হতো। এখন সুস্থ। ওকে বুকের দুধ খাওয়াই। অনেক শিশুবিশেষজ্ঞ দেখিয়েছি। চিকিৎসক বলেছেন, নাভি এমনিতেই ছোট হয়ে যাবে। এখন কয়েক দিন ধরে হোমিও খাওয়াচ্ছি। সঠিক পরামর্শ দেবেন। চিকিৎসক অ্যালোপ্যাথি ওষুধ দিয়েছেন, তাতেও কোনো কাজ হয়নি। পাতলা পায়খানার জন্য হোমিওতে কাজ হয়।
সুমি, শ্রীপুর, গাজীপুর।
পরামর্শ: সার্বিকভাবে আপনার শিশু সুস্থ আছে। বাচ্চা আট মাসে অর্থাৎ ৩৪ সপ্তাহে হয়ে থাকলে—ওজন হয়তো আনুমানিক দেড় কেজি ছিল। এখন ওজন তিন কেজি বলেছেন, ওজন ঠিক আছে। বুকের দুধ খাওয়া অব্যাহত রেখে ভালো করেছেন। নাভিজনিত সমস্যাটি Small umbilical hernia হতে পারে। এটি এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।
সমস্যা: আমার ছেলের বয়স তিন বছর পাঁচ মাস। ওজন ১৫ কেজি। ওর ক্রনিক ডায়রিয়া আছে। জন্মের পর থেকেই সবুজ রঙের আমাশয়ের মতো ছয়-সাতবার পায়খানা করত। এ সমস্যা এখনো আছে। দুই বছর ধরে পেপ-২ সিরাপ খাওয়ানো হয়। এটি খেলে পায়খানা মোটামুটি ভালো হয়। বেশ কয়েকবার পায়খানা টেস্ট করে ওষুধ খেয়ে কোনো উপকার হয়নি। ওর বমি ভাব খুব বেশি। রুচি একদম নেই। সম্প্রতি করা একটি রিপোর্ট দিলাম।
শামীম আরা, নিকুঞ্জ-২, ঢাকা।
পরামর্শ: আপনার বাচ্চার ওজন ও পুষ্টি ঠিক আছে। খুব বেশি চিন্তার কিছু নেই। স্বাভাবিক অবস্থায়ও এ ধরনের পায়খানা হতে পারে। বাচ্চার যেহেতু গ্রোথ ঠিক আছে, একবার হয়তো পায়খানার কালচার করা যেতে পারে। কালচার রিপোর্ট অনুযায়ী যদি জিআরডিআর পাওয়া যায় তবে তার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করানো যেতে পারে।
সমস্যা: আমার ভাগনের জন্মগত তালু কাটা (আলজিহ্বার পাশেই)। এ কারণে সে স্বাভাবিকভাবে খেতে ও কথা বলতে পারে না। বাচ্চাটির বর্তমান বয়স এক বছর সাত মাস এবং ওজন ১১ কেজি। বাচ্চাটির এক বছর এক মাস বয়সে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের একজন সহকারী অধ্যাপককে (শিশু সার্জারি) দিয়ে তালু কাটা অপারেশন করাই। কিন্তু কোনো সুফল হয়নি। আমার প্রশ্ন হলো, আবারও অপারেশন করা হলে কি এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে? বাংলাদেশের কোথায় এর উন্নত চিকিৎসা হয় এবং কী পরিমাণ টাকার প্রয়োজন হতে পারে?
মো. ফারুক হোসেন
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
পরামর্শ: অপারেশনের পর তালু কাটা বা cleft palate অপারেশনে ঠিক হয়ে থাকলে আর করানোর দরকার নেই। যেহেতু প্রথম থেকেই সে কথা বলতে পারত না তাই কথা বলতে একটু সময় লাগবে। সাধারণত ১৩-১৪ মাস বয়সে বাচ্চারা বাবা-মা বলা শেখে। ওর যেহেতু সমস্যা ছিল তাই ওর সঙ্গে কথা বলতে হবে—ওকে সময় দিতে হবে। টেলিভিশন দেখলে এমনিতেও কথা বলতে দেরি হয়। এ বিষয়গুলো খেয়াল করুন। বাচ্চা আস্তে আস্তে কথা বলবে।
সমস্যা: আমার ছেলের বয়স তিন মাস সাত দিন। ওকে ডেলিভারির পূর্ণ সময় হলে অস্ত্রোপচার করা হয়। ও আমাদের প্রথম সন্তান। ও শুধু বুকের দুধ খায়।
আমার ছেলের বেশির ভাগ সময় মাথা গরম থাকে। এটা এক মাস ধরে হচ্ছে। আর দু-তিন দিন ধরে মাঝেমধ্যে চোখ সামান্য লাল দেখাচ্ছে। ওর চোখ ধবধবে সাদা হয়নি এখনো।
ও এমনিতে অযথা কান্নাকাটি করে না। এবং খাওয়া, ঘুম সব ঠিক আছে। পায়খানা করে দিনে একবার। সাধারণত দু-এক দিন পরপর পায়খানা করে। ওর পায়খানা ও বায়ু ছাড়ায় খুব দুর্গন্ধ। মাঝেমধ্যে বমি করে। জন্মের ১৫ দিন পর ঘন ঘন পায়খানা ও বমি করত। তখন তাকে হোমিও ওষুধ খাওয়ানো হলে ভালো হয়ে যায়। ওর পিঠের নিচের দিকে নীল ছোপ ছোপ দাগ আছে। কয়েক দিন ধরে মুখ দিয়ে লালা পড়ছে। ও মাথায় কোনো আঘাত পায়নি। মাথার এ সমস্যার জন্য তাকে হোমিও ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। শুয়ে থাকলে মাথার নিচে খুব ঘামে। আমার ছেলের এ সমস্যা নিয়ে আমি খুবই দুশ্চিন্তায় আছি।
শাহানা আক্তার, ঝিকরগাছা, যশোর।
পরামর্শ: আপনার ছেলে সার্বিকভাবে সুস্থ আছে। বৃদ্ধির সময় শিশুদের মাথা স্বাভাবিকভাবে গরম থাকে। দুশ্চিন্তা করবেন না, শুধু বুকের দুধ দেবেন আপনার শিশুকে। অন্য কিছু খাওয়াবেন না। পায়খানা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
সমস্যা: আমার ছেলের বয়স এক বছর। ওজন নয় কেজি। ওর সাত মাস বয়সে এক্স-রে এবং কালার ডপলার করিয়ে ধরা পড়ে হার্ট ডান দিকে। তবে এক্স-রে ও কালার ডপলারের রিপোর্ট ভালো আসে। হার্ট, ভালভ সবকিছুই ভালো আছে এবং সে সুস্থ-স্বাভাবিক। তার কোনো সমস্যাও বাহ্যিকভাবে দেখা যায় না। তার একটাই সমস্যা, জন্মের দুদিন থেকে হিক্কা ওঠে। প্রথম তিন-চার মাস প্রতিদিন তিন-চারবার করে হিক্কা উঠত এবং প্রচুর গ্যাস হতো ওর পেটে। আস্তে আস্তে তা পরিমাণে কমতে থাকে এবং বর্তমানে গড়ে দুদিনে একবার হিক্কা ওঠে। এর সঙ্গে খাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। যেকোনো সময় হিক্কা ওঠে। শিশুবিশেষজ্ঞ দেখালে তিনি বলেন, চার-পাঁচ মাস বয়সে কমে যাবে। কিন্তু এক বছর হয়ে গেল, এখনো তা কমছে না এবং মাঝেমধ্যে পেটে গ্যাস হয়। এ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি। কী কারণে হিক্কা ওঠে এবং কীভাবে তার চিকিৎসা করাতে হবে? এটা কি কোনো জন্মগত ত্রুটির কারণে হতে পারে? ডানদিকে হার্ট নিয়ে সে কি সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে? এ জন্য ভবিষ্যতে তার কি কোনো সমস্যা হতে পারে? হলে করণীয় কী? এখন কি তার কোনো চিকিৎসার দরকার আছে? আপনার পরামর্শ আমার জন্য সত্যিই খুব জরুরি।
সামিয়া, সিলেট।
পরামর্শ: মানুষের ডান দিকে জন্মগতভাবে স্বাভাবিকভাবেই হূৎপিণ্ড থাকতে পারে। একে বলে ডেস্কটোকার্ডিয়া। এ ধরনের মানুষ সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারে। আপনার শিশুও পারবে। আপনার ছেলের ডান দিকে হার্ট হওয়াতে কোনো অসুবিধা হবে না। যে হিক্কা ওঠে বলেছেন তার সঙ্গে হার্টের কোনো সম্পর্ক নেই। ছেলেকে কাঁধের ওপর নিয়ে গ্যাস বের করার চেষ্টা করুন। এ ছাড়া সিরাপ ডমপিরিডন ১.৫ মিলি দিনে দুই থেকে তিন বার চার-পাঁচ দিন দেবেন। দুই বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়াবেন। সঙ্গে স্বাভাবিক ঘরের খাবার দেবেন। আশা করি, আপনার বাচ্চার বৃদ্ধি ভালোভাবেই হবে। এবং ডান দিকের হার্ট নিয়ে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে।
সমস্যা: আমার মেয়ের বয়স পাঁচ বছর আট মাস। খাবার-দাবার, চলাফেরা সবকিছুই স্বাভাবিক। সমস্যা হচ্ছে, আমার মেয়ের পায়ুপথের সামনে একটি ছোট গোটার মতো। ডাক্তারকে দেখালে তিনি বলেন, এটি গেজের মতোই। তবে এখন কোনো রকম চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। সব সময় যেন শাকসবজি ও তরল ধরনের খাবার দিই। এর মধ্যে দুবার সেই গোটাটা ফেটে গিয়ে সেখান দিয়ে রক্তপাত হয়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এই গেজটা কি কোনো ওষুধের মাধ্যমে সারানো সম্ভব? এই রোগ থেকে মুক্তির উপায় কী? (ওর বাবা ও ওর জেঠুরও এই রোগ আছে)।
মলি, ব্রাহ্মপল্লী, ময়মনসিংহ।
পরামর্শ: নরম আলাদা গোটার মতো চামড়া বা ত্বক উঁচু হওয়াকে স্কিন ট্যাগ বলা হয়ে থাকে। এর জন্য কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। এর জন্য সাধারণত রক্তপাতও দেখা যায় না। তবে সাধারণত মলদ্বারে অ্যানাল ফিশার হলে রক্তপাত হতে পারে। তবে এ বয়সের বাচ্চাদের এটা না হওয়ারই কথা। স্কিন ট্যাগের জন্য কোনো ওষুুধের দরকার নেই। যদি মাঝেমধ্যে রক্তপাত হতেই থাকে তাহলে যে চিকিৎসককে দেখাচ্ছেন তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করুন। অ্যানাল ফিশার কি না পরীক্ষা করান। চিকিৎসকের পরামর্শমতো ব্যবস্থা নিন।
সমস্যা: আমার ছোট ভাইয়ের বয়স সাড়ে ছয় বছর। প্রায় নয় মাস আগে ওর শারীরিক সমস্যার কারণে একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই। চিকিৎসকের পরামর্শে ওর কয়েকটা পরীক্ষা করানো হয়। তার মধ্যে H6 capillary Electrophoresis Test-এ Comments আসে—suggestive of beta thalassaemia minor। প্রেসক্রিপশন ও পরীক্ষার ফটোকপি দেওয়া হলো। বর্তমানে ওর মাঝেমধ্যে প্রচণ্ড জ্বর আসে। এরপর আর কোনো চিকিৎসককে দেখানো হয়নি। ওষুধ খাওয়ানো বন্ধ আছে। বর্তমানে কোনো চিকিৎসা নেওয়া হচ্ছে না। এই রোগ ও এর প্রতিকার এবং আমাদের এখন কী করা উচিত, এ সম্পর্কে আপনার পরামর্শ চাই।
মো. আবদুল্লাহ আল মামুন
কামারখন্দ, সিরাজগঞ্জ।
পরামর্শ: সাধারণত বেটা থ্যালাসেমিয়া মাইনরের কোনো চিকিৎসা নেই। হয়তো মা অথবা বাবা দুজনের একজনের বেটা থ্যালাসেমিয়া মাইনর বা ট্রেইট আছে। হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস পরীক্ষা করলে এটা জানা যাবে। বাবার বা মায়ের একজনের যদি পজিটিভ হয় তাহলে সাধারণত শিশু তাতে আক্রান্ত হয় না। যদি দুজনের পজিটিভ হয় তবে এ ধরনের ক্ষেত্রে বেটা থ্যালাসেমিয়া ট্রেইট হওয়ার সম্ভাবনা প্রতি চারজনে একজন। আপনার ভাইয়ের ভবিষ্যতে যেন কোনো নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে বিয়ে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। মাঝেমধ্যে জ্বর এলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন। জ্বরের সঙ্গে এ রোগের কোনো সম্পর্ক নেই।
সমস্যা: আমার মেয়ের বয়স এক বছর ছয় মাস। সমস্যা হলো যোনিপথ দিয়ে তার সাদা স্রাব হচ্ছে এবং মাথায় খুশকির মতো কী লেগে আছে। হালকা চুলকায়, এ সমস্যার জন্য পরামর্শ ও চিকিৎসা জানতে চাই।
মো. মনিরুজ্জামান
কমলনগর, লক্ষ্মীপুর।
পরামর্শ: প্রস্রাব-পায়খানার পর ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে দেবেন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন। এতে করে আপনার মেয়ে সুস্থ না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসক কোনো অ্যান্টিবায়োটিক অথবা মেট্রোনিডাজল সঙ্গে দিতে পারেন। খুশকির জন্য যে শ্যাম্পো পাওয়া যায় তা ব্যবহার করতে পারেন। বেশি খুশকি হলে ১% হাইড্রোকর্টিসন ক্রিম মাথায় লাগাবেন কিন্তু ঘষবেন না।
সমস্যা: আমার প্রথম সন্তানের বয়স ২১ মাস। ওজন আট কেজি। বুঝতেই পারছেন ও খুব হালকা এবং শুকনো। উচ্চতা ৩১ সেন্টিমিটার। ভাত কম খেতে চায়। রাতে একদম খেতে চায় না। অন্যান্য খাবার খায়। সব ধরনের ফল, বিশেষ করে কলা, আঙুর তার বেশ পছন্দ। এখনো মায়ের দুধ পান করে। ঘুম, পায়খানা স্বাভাবিক। খেলাধুলা করে। দুষ্টুমিও করে খুব। হাঁটে, দৌড়ায়, বইয়ের ছবি চেনে, বলে। কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম মেডিকেলের একজন সহযোগী অধ্যাপককে দেখিয়েছি। তিনি বাচ্চাকে ভাতের পর তিনবার (দৈনিক) এক চামচ করে তেল খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু তার পরও কোনো পরিবর্তন দেখছি না। ছোটবেলা থেকেই বাড়তি কোনো দুধের কৌটা ব্যবহার করি না। আমার একটাই চিন্তা, ছেলেটির ওজন কম ও শুকনো। কীভাবে তার স্বাস্থ্যের উন্নতি করা যায়—জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, চট্টগ্রাম।
পরামর্শ: শিশুর বর্তমান ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম আছে। এটা স্বাভাবিক কি না তা নির্ভর করে ওর জন্মের ওজনের ওপর এবং বাবা-মায়ের উচ্চতার ওপর। যেহেতু আপনার শিশু স্বাভাবিক হাঁটে, দৌড়ায় তাই ওর বৃদ্ধির দিক থেকে বিশেষ কোনো চিন্তার কারণ নেই বলেই মনে হয়। শিশুদের বৃদ্ধি ঠিকভাবে হচ্ছে কি না সেটা মাপার এবং গ্রোথ চার্টের সঙ্গে বাবা-মায়ের গ্রোথ মিলিয়ে সঠিকভাবে বলা সম্ভব হবে। প্রয়োজনে একজন শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
সমস্যা: আমার একটা ছেলেসন্তান, বয়স এক বছর। সিজারিয়ান পদ্ধতিতে তার জন্ম হয়েছে। জন্মের এক সপ্তাহের মধ্যেই নাকের বাম দিকের ছিদ্র দিয়ে হলুদ বর্ণের ঘন শ্লেষ্মা বের হতে থাকে। চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রে Norsol Lotion ড্রপ ব্যবহার করার জন্য বলেছিলেন এবং অনেক দিন পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। বর্তমানে তার উভয় নাক আক্রান্ত। কিছুদিন নাক দিয়ে পাতলা পানির মতো বের হয় আবার কিছুদিন ঘন শ্লেষ্মা এবং কিছুদিন শুকনো। সে যখন ঘুমায়, কিছুক্ষণ ঘুমানোর পরই নাক বন্ধ হয়ে যায়, তখন মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে থাকে—এভাবে একপর্যায়ে ঘুম ভেঙে যায় এবং কান্নাকাটি করে। তার দুই হাত দিয়ে নাক ও চোখ চুলকায়। রাইনোজল ড্রপ ব্যবহার করলে কিছুক্ষণের জন্য স্বাভাবিক হয়। আবার একটু পরই নাকের শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। রাইনোজল ড্রপ অনেক দিন ধরে ব্যবহার করে আসছি। স্থায়ীভাবে কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। বাচ্চার বয়স যখন ১৭ দিন, তখন সিলেট ওসমানী হাসপাতালের শিশুবিশেষজ্ঞ আখলাক আহাম্মদকে দিয়ে চিকিৎসা করাই কিন্তু কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। দেড় মাসের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের একজন শিশুবিশেষজ্ঞকে দেখাই, এতেও কোনো সুফল আসেনি। এখন স্থায়ীভাবে সুস্থ হওয়ার জন্য কী প্রয়োজন, পরামর্শ চাই।
রিপন মিয়া, মাধবপুর, হবিগঞ্জ।
পরামর্শ: আপনার শিশুকে Fluticason নাকের স্প্রে এক পাফ করে দুই নাকে রোজ একবার ব্যবহার করে দু সপ্তাহের মধ্যে উপকার পেলে চার সপ্তাহ ব্যবহার করুন। এতে ভালো না হলে কোনো নাক-কান গলা বিশেষজ্ঞ ও শিশুবিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো ব্যবস্থা নিন।
সমস্যা: আমার ছেলের বয়স ১৩। ছোট থেকে ওর তেমন কোনো সমস্যা নেই। যখন ওর বয়স আট বছর, তখন থেকে ওর প্রথমে পেটব্যথা দেখা দেয়। কিন্তু এ সমস্যা এখন নেই। এখন তার মাঝেমধ্যে বমি হয়ে থাকে, যা খুব মারাত্মক। তখন তাকে স্যালাইন দিতে হয়, তারপর সে ঠিক হয়। অনেক শিশুবিশেষজ্ঞ দেখিয়েছি। তাঁরা বলেছেন, ছোট বাচ্চা, ১১ বছর পার হলে ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু ১১ বছর পার হয়েছে তবুও সমস্যা রয়ে গেছে। তাই কী করা উচিত? আপনার পরামর্শ আমার ছেলের জন্য সত্যি খুব জরুরি।
বাসন্তী রানী
ভান্ডারি, রানীশংকৈল, ঠাকুরগাঁও।
পরামর্শ: সাধারণত Cyclical বমিতে এটা হতে পারে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে কদাচিৎ পেটের নাড়ি-ভুঁড়ির ওলটপালট হলে (Malrotation of the gut) এমনটি হতে পারে। আপনি একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। আশা করি, অচিরেই এটি সমাধান হয়ে যাবে।
সমস্যা: জন্মের পর এক বছরের মধ্যে আমার বাচ্চার প্রচণ্ড জ্বর হয়। জ্বর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী হাসপাতালে চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা করি। জ্বরে আক্রান্ত হওয়া অবস্থায় ওর শারীরিক কিছু পরিবর্তন দেখা দেয়, যেমন ১. জ্বরের ফলে ওপরের দাঁত নিচের দাঁতের সঙ্গে খিঁচে যেত। ২. হঠাৎ শরীর চমকিয়ে উঠত। ৩. অজ্ঞান হয়ে যেত। একবার অজ্ঞান হলে দীর্ঘক্ষণ থাকত। ৪. শরীরের অঙ্গসমূহ কালো বর্ণের হয়ে যেত। আরও অনেক সমস্যা দেখা যেত, তবে এগুলোই বেশি।
চিকিৎসার পর মোটামুটি ভালো হয়। এখন এই অবস্থায় আছে। ওর বয়স প্রায় ছয় বছর। কিন্তু এখনো যদি কোনো কারণে কান্না করে, তাহলে প্রায় এক মিনিট শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ থাকে।
ওর মন-মেজাজ খিটখিটে। ছয় বছর বয়সের একটা শিশু যে পরিমাণে বৃদ্ধি পায়, সে ওই পরিমাণে বেড়ে ওঠেনি।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে প্রত্যাশা, এ রোগের বিস্তারিত বর্ণনা দেবেন এবং কোন ধরনের বিশেষজ্ঞের কাছে রোগী দেখাব, তার পরামর্শ দেবেন। আমরা গ্রামে বাস করি। কীভাবে সহজে এ রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারি?
মো. আবু তাহের
নতুন মুন্সির হাট, ফুলগাজী, ফেনী।
পরামর্শ: জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি শিশুদের একটি সচরাচর সমস্যা। এখন হয়তো আর হবে না। বয়স পার হয়ে গিয়েছে। তবে রাগ হলে, এর জন্য চিকিৎসা হলো ওকে না রাগানো। ওর মুখোমুখি না হওয়া, ওর সঙ্গে জেদ না করা। স্বাভাবিক আচরণ করুন, বাড়ির খাবার খেতে দিন। ফলমুল খেতে দিন, খেলাধুলা করতে দিন। এমনিতেই স্বাভাবিক বৃদ্ধি পাবে।
সমস্যা: আমার ছেলের বয়স ৫৭ দিন। ১৫ দিন হলো তার পাতলা পায়খানা ও পেট ফাঁপা। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী Pedicon drop ও Eromycin drop দিই। কিন্তু ড্রপ খাওয়ানোর পর শুধু পেট ফাঁপা কমেছে। পায়খানা ভালো হচ্ছে না। পাতলা আমের মতো পড়ছে। দ্বিতীয় বার চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে তিনি কোনো ওষুধ দেননি। বলেন, মায়ের দুধ খেলে ভালো হবে কিন্তু কয়েক দিন হয়ে গেল ভালো হচ্ছে না, শুধু আম পড়ছে। ছেলে এক ঘণ্টা পরপর মায়ের দুধ খায় কিন্তু ঘুমের পরিমাণ কম। রাতে কান্নাকাটি করে। মায়ের দুধ খেয়ে পেট ভরে না। ওর বয়স যখন ১০ দিন, তখন মায়ের দুধ পায়নি। তখন বায়োমিল-১ দেওয়া হয়। কিছুদিন খাওয়ার পর পেটের সমস্যার কারণে সাত দিন পর বাদ দিই। তার পর থেকে মায়ের দুধ খাওয়ানো হয়। ৪৫ দিনে তাকে টিকা দিলাম। টিকা দেওয়ার পর তার ঘুম কম হয়। এখন মূল সমস্যা, তার পাতলা পায়খানা ভালো হচ্ছে না ও স্বাভাবিক ঘুম হচ্ছে না। আপনার পরামর্শ অতি জরুরি।
মো. আ. ওহাব , সেউজগাড়ী বগুড়া।
পরামর্শ: আপনার শিশু সুস্থ। যেহেতু সে শুধু বুকের দুধ খাচ্ছে এ কারণেও ঘনঘন পায়খানা হতে পারে। ওর ওজন যদি ঠিক থাকে তাহলে এ রকম পাতলা পায়খানাতে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না। গুঁড়ো দুধ খাওয়ার জন্য শিশুর পাতলা পায়খানা হতে পারে। সুতরাং গুঁড়ো দুধ খাওয়ানো পরিহার করে ভালো করেছেন। ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ দেবেন। পানিও খাওয়াবেন না। ছয় মাস বয়স হলে বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়ির হাঁড়ির খাবার দেবেন। এবং দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়াবেন। টিকার সঙ্গে ঘুম কম হওয়ার কোনো কারণ নেই। প্রথমবার টিকা দিলে বাচ্চা এমনিতেই একটু কান্নাকাটি করতে পারে। ঘুম কম হতে পারে। এটি ঠিক হয়ে যাবে।