স্বাস্থ্যবাংলাতে আমরা যেসব প্রশ্নের আধিক্য দেখি তাদের মাঝে একজিমা নিয়ে সমস্যা অন্যতম। আজ একজিমা নিয়ে কিছু সাধারন কথা জানাবো।
একজিমা কি?
একজিমা হচ্ছে ত্বকের এক ধরনের প্রদাহ, যাতে ত্বক লালচে হয়ে যায় এবং ফুলে ওঠে। সেই সঙ্গে থাকে প্রচণ্ড চুলকানি। রোগী ভেদে উপসর্গ মৃদু থেকে তীব্র হতে পারে।এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ, যা থাকতে পারে অনেক মাস বা বছরজুড়ে। রোগটি অনেকের মাঝেই দেখা যায়।
একজিমা হয়েছে কী করে বুঝবেন
একেক ধরনের একজিমার লক্ষণ একেক রকম হয়। সাধারণত একজিমার লক্ষণ ও উপসর্গগুলো হলো :
লালচে, প্রদাহযুক্ত ত্বক
শুষ্ক, খসখসে, ফেটে যাওয়া ত্বক
ত্বকে চুলকানি
হাত ও পায়ের ত্বকের মধ্যে ছোট ছোট পানির ফুসকুড়ি
ত্বকে সংক্রমণ হলে ত্বক ভেজা ভেজা হয় এবং পুঁজ বের হতে পারে
ত্বকের যে সমস্ত জায়গা বারবার চুলকানো হয় সেগুলো পুরু হওয়া
পারিবারিক ইতিহাসের সাথে কি কোন সম্পর্ক আছে?
একজিমা রোগীদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে অ্যাজমা, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস (হে ফিভার) কিংবা একজিমার ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়। ফলে একজিমার সঙ্গে সচরাচর বিভিন্ন অ্যালার্জি যেমন হে ফিভার ও অ্যাজমার সহাবস্থান থাকে।
একজিমা হওয়ার কারণগুলো কী কী?
রাসায়নিক দ্রব্য, ডিটারজেন্ট, সাবান অথবা শ্যাম্পু থেকে সংক্রমণ
এলার্জি হয় এমন বস্তু থেকে যেমন- পরাগ রেণু (Pollen), ঘরবাড়ির ধুলা, পশুপাখির পশম, উল ইত্যাদি থেকে
হরমোন পরিবর্তন, বিশেষ করে মাসিকের সময় এবং গর্ভাবস্থায়
অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত ঠাণ্ডা ও স্যাঁতসেঁতে ভেজা আবহাওয়া
বাড়তি সতর্কতা
যেসব বস্তু একজিমার সমস্যা আরও বাড়িয়ে তোলে তা থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা
যেসব খাবার খেলে একজিমা বাড়ে তা পরিহার করা
একজিমা কয় প্রকারের হয়ে থাকে?
একজিমা কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে, যেমন:
এটোপিক একজিমা (Atopic Eczema)
শরীরের যেসব স্থানে ভাঁজ পড়ে যেমন-হাঁটুর পিছনে, কুনইয়ের সামনে, বুকে, মুখে এবং ঘাড়ে সেসব স্থান এটোপিক একজিমা দ্বারা আক্রান্ত হয়।
এলার্জিক কনট্যাক্ট একজিমা (Allergic Contact Eczema)
কোন পদার্থ বা বস্তু (Substances) থেকে যখন একজিমা দেখা দেয়। শরীরের যে অংশে এলার্জি হয় সেখানে লালচে দানা দেখা যায়। কিন্তু এটা শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে যেতে পারে।
ইরিট্যান্ট কনট্যাক্ট একজিমা (Irritant Contact Eczema)
এটি এলার্জিক একজিমার মতই এবং সাধারণত ডিটারজেন্ট অথবা পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহৃত দ্রব্যের ঘনঘন ব্যবহারের মাধ্যমে এই একজিমা দেখা দেয়।
সেবোরিক একজিমা (Seborrhoeic Eczema)
মাথার ত্বকে হালকা খুশকির মতো তৈলাক্ত ফুসকুড়ি দেখা যায়। এর ফলে শরীরের অন্যান্য অংশ লালচে এবং যন্ত্রণার সৃষ্টি হতে পারে। এটি সাধারণত এক বছরের নিচের শিশুদের দেখা যায়। ম্যালাসেজিয়া ইষ্ট (Malassezia yeast) দ্বারা সংক্রমণের মাধ্যমে Seborrhoeic Eczema দেখা দেয়।
ভেরিকোস একজিমা (Varicose Eczema)
সাধারণত বয়স্ক লোকদের পায়ের নিচের অংশে এই একজিমা হতে দেখা যায়। রক্ত সংবহনে সমস্যা (Poor Circulation) এবং উচ্চচাপের কারণে হয়।
ডিসকয়েড একজিমা (Discoid Eczema)
প্রাপ্ত বয়স্ক যে কারোরই এই একজিমা হতে পারে। সাধারণত বয়স্ক লোকদেরই এটি বেশি হতে দেখা যায়। শুষ্ক ত্বক সংক্রমণের মাধ্যমে এটি হয়ে থাকে। এতে শরীরের যে কোনো অংশে বিশেষ করে পায়ের নিচের অংশে গোলাকৃতি লাল, শুষ্ক এবং চুলকানির মতো হয়ে থাকে।
কী ধরনের চিকিৎসা আছে
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন ও লাগাতে হবে। যেমন-
এন্টিবায়োটিক সেবন
এন্টিহিস্টামিন (Antihistamine) সেবন
স্টেরয়েড ক্রিম ব্যবহার
হরমোন জাতীয় ওষুধ সেবন (Oral Steroid)
শেষ কথা
একজিমা নিয়ে এসবই কিছু সাধারন কথা। আপনার যেকোনো সমস্যায় নিকটস্থ ডাক্তারের সাথে দেখা করাই সবচেয়ে উপযুক্ত পন্থা। আর ছোটখাটো সমস্যায় স্বাস্থ্যবাংলার প্রশ্ন-উত্তর বিভাগ তো রয়েছেই।
ভালো থাকবেন
ডা. রায়হান কবীর খান