গর্ভপাত করানোর স্বাস্থ্যগত কারন

গর্ভাশয়ের ভ্রুনটি ডিম্বানু নিষেকের পর থেকে পরবর্তী পাঁচ মাসের (২০ সপ্তাহ) মধ্যে যে কোন সময়ে প্রসবের রাস্তা দিয়ে বের হয়ে যাবার নামই গর্ভপাত বা Abortion। বর্তমান বিশ্বে অধিকাংশ গর্ভপাতই হয় ইচ্ছাকৃত ভাবে ভ্রুন নষ্ট করার কারনে। পাঁচ মাস (২০ সপ্তাহ) বয়সের পর শিশুর সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গঠনই শেষ হয়ে যায়, তাই এসময়ে ইচ্ছাকৃত গর্ভপাত ঘটানোকে শিশু হত্যা বলাই শ্রেয়তর।

তবে এর ব্যতিক্রমও আছে, অনেক সময় মায়ের সন্তানটি ধারন করার ইচ্ছা থাকলেও নিজে নিজে গর্ভপাত (Miscarriage) হয়ে যেতে পারে আবার মায়ের স্বাস্থ্য রক্ষা বা শিশুটিকে চরম দুর্ভাগ্যের (চরম প্রতিবন্ধি) হাত থেকে বাঁচাতেও বৈধভাবে গর্ভপাত (Therapeutic abortion) করানো যেতে পারে। এখানে শুধুমাত্র স্বাস্থ্যগত বা চিকিৎসা সংক্রান্ত কারনে গর্ভপাত করার বৈধ দিক গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো।

১। গর্ভাবস্থা চালিয়ে গেলে যদি মায়ের মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে অথবা তার অপুরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়।

২। ভবিষ্যতে জন্মনেয়া সন্তানটি যদি খুব খারাপ ধরনের শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধি হয়ে জন্মানোর নিশ্চিত সম্ভাবনার কথা জানা যায়। যেমন:

  • মায়ের আলট্রাসনোগ্রাম বা এম্নিওসেন্টেসিস (Amniocentesis) করে জানা গেলো শিশুটি চরম বিকলাঙ্গ
  • গর্ভের প্রথম তিন মাসে মা জার্মান মিসল, গুটি বসন্ত, টক্সপ্লাজমোসিস জাতীয় রোগে ভুগে থাকেন।
  • বাবা অথবা মা এর কেউ যদি মানসিক প্রতিবন্ধি হন
  • মা যদি গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে রেডিওথেরাপীর মতো চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।
  • মায়ের কোন রোগের চিকিৎসার কারনে যদি উনি শিশুটির ক্ষতির কারন হয় এমন কোন অসুধ খেয়ে থাকেন, ইত্যাদি।

৩। গর্ভের সন্তানটি যদি ধর্ষনের ফসল হিসেবে জন্ম নেয়।

৪। যদি জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতির ব্যর্থতার কারনে গর্ভধারন হয় এবং তা চালিয়ে গেলে মায়ের মানসিক বা শারীরিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবার সম্ভাবনা থাকে।

থেরাপিউটিক এবরশন করাতে হলে স্ত্রীর সাথে সাথে স্বামীরও লিখিত সম্মতি নেবার প্রয়োজন হয়। এটা অবশ্যই হাসপাতালে করানো উচিত। মায়ের কোনো রোগ এর কারনে যদি এটা করাতে হয় তাহলে অবশ্যই সেই বিষয়ে কমপক্ষে দুই জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের লিখিত অনুমতির প্রয়োজন আছে। যদি এমন অবস্থা দেখা দেয় যে তৎক্ষনাত গর্ভপাত না করালে মায়ের মৃত্যুর সম্ভাবনা আছে তাহলে অবশ্য সার্জন অন্য কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীতই এমনটি করতে পারেন।

চিকিৎসাশাস্ত্রের মূলমন্ত্রে আছে যে ভ্রুনের প্রথম দিন থেকেই তাকে একটি মূল্যবান প্রাণ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। তাই থেরাপিউটিক এবরশনের বাচ্চাটি যদি সুস্থ্য থাকে এবং তাকে বাঁচিয়ে রাখা যায় তাহলে অবশ্যই সেই চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত।

 

Related posts

Leave a Comment