পূর্ব সংস্কার এবং সাইকোথেরাপি – সৈয়দা সালমা শাহীন

পূর্ব সংস্কার এবং সাইকোথেরাপিসৈয়দা সালমা শাহীন

কোন রকম তথ্য প্রমাণ ছাড়া বা অযৌক্তিক এবং ভ্রান্ত বিশ্বাস দ্বারা পরিচালিত নেতিবাচক মনোভাবকে পূর্ব সংস্কার বুঝায়। পূর্ব সংস্কার কোন দল, জাতি, সম্প্রদায় সম্পর্কে অপর জাতি, গোষ্ঠি, গোত্র, সম্প্রদায়, যে অন্ধবিশ্বাস ও নেতিবাচক মনোভাব পোষণ কোরে তাকেই পূর্ন সংস্কার বুঝায়। নিউকম্ব মনে করেন; “পূর্ব সংস্কার হল এক ধরণের প্রতিকূল মনোভাব, যা পূর্বে গৃহীত ধারণা, কর্ম, চিন্তা বা অনুভূতি, যা অপর কোন দলের বিপক্ষে কাজ করে”। যেমনঃ আমাদের পুরুষ-শাসিত সমাজে কন্যা শুধু জন্ম গ্রহনকে পাপ বা অভিশাপ মনে করা হয়।

আবার হিন্দু মুসলিম দ্বন্দ্ব(সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি), মুচি, মেথর, ঝাড়ুদার প্রভৃতি পেশাজীবীদের প্রতি অপেক্ষাকৃত উঁচু স্তরের পেশাজীবীদের নেতিবাচক এবং বোষম্যমূলক আচরণকে পূর্ব সংস্কার বলে চিহ্নিত করা যায়।

পূর্ব সংস্কার অর্জন ও সংরক্ষনঃ
ব্যক্তি মধ্যে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় প্রভাবে, বিচিত্র প্রকৃতির নেতিবাচক মনোভাবের শিক্ষণ ঘটে। শিশুর বা ব্যক্তি তাঁর পিতা মাতা, পরিবারের অন্যান্য সদস্য, শিক্ষক, সমবয়সী বন্ধু, সমাজের অন্য গোষ্ঠি, দলের সংস্পর্শ থেকে, অন্য দল, গোষ্ঠি সম্পর্কে যে ভ্রান্ত ধারণা, ভুল চিন্তন এবং আচরণগত যে বৈষম্যমূলক মনোভাবের অর্জন করে বা যে সব পূর্ব ধারনাকে গ্রহন করে, তাকেঃ “পূর্ব সংস্কার” বুঝায়। তবে প্রতক্ষ্য অভিজ্ঞতা থেকেও পূর্ব সংস্কারের মত নেতিবাচক মনোভাবের জন্ম নিতে পারে। এছাড়াও পূর্ব সংস্কার কতগুলো গুরুত্বপুর্ণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেও অর্জিত হতে পারে। যেমনঃ

সামাজিক বৈষম্য বৈশিষ্ট্যঃ  সমাজের কোন বিশেষ শ্রেণী, সমাজে বসবাসকারী অন্য শ্রেনীকে ক্রমাগত শোষণ, পীড়ন, বিদ্বেষমূলক যে আচরণ করে, তা থেকে বঞ্চিত শ্রেণী অপেক্ষাকৃত সচ্ছল শ্রেণীর প্রতি বিরূপ মনোভাব জন্ম নেয়।

ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যঃ কিছু কিছু শারীরিক বা ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য পূর্ব সংস্কার সংরক্ষণ এবং বিস্তারে কারণ হিসেবে চিহ্নিত। অতি মোটা, অতি ছোট, অতি কালো, অন্ধ, খোঁড়া গঠনাকৃতির, প্রতিবন্ধীদের মানুষের প্রতি আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পার্থ্যক্যপূর্ন ও স্পষ্ট।

পূর্ব সংস্কার এবং সাইকোথেরাপিঃ এক কথায় পূর্ব সংস্কার অর্জন ও সংরক্ষন অস্বাভাবিক ব্যক্তিত্ব বিকাশের অপর নাম। তাই যে কোন পূর্ব সংস্কার বা আচরণ বা মনোভাব, যে কোন ব্যক্তি বা সামাজিক গোষ্ঠির মধ্যে যত প্রকট হবে, সে সমাজ তত বেশি অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকবে, অনগ্রসর হবে। আজকের সমাজে, ভুল আবেগের চর্চা এবং নেতিবাচক মনোভাবের যে বিস্তার প্রত্যক্ষ হচ্ছে, তা অসুস্থ ব্যক্তিত্ব ছাড়া আর কিছুই হতে পারেনা। আর সাইকোথেরাপি ব্যক্তিকে তাঁর প্রথাগত ধারণা থেকে মুক্ত হয়ে, কি করে সুস্থ, স্বাভাবিক সামাজিক ব্যক্তিত্ব বিকাশ এবং সংরক্ষণ করবে, সে সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাদানের মাধম্যে “পূর্ব সংস্কার অর্জন ও সংরক্ষণ” রোধ করতে সক্ষম।

লেখকঃ সৈয়দা সালমা শাহীন

বিএসসি অনার্স, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, প্রশিক্ষণ  প্রাপ্ত সাইকোথেরাপিস্ট,

ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ,

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

Related posts

Leave a Comment