জন্ডিস

সত্যিকার অর্থে জন্ডিস কোনো রোগ নয়, এটা রোগের একটা উপসর্গ। জন্ডিস সম্বন্ধে কম বেশী সবাই কিছু না কিছু জানে। এ রোগে চোখের সাদা অংশ, হাত-পা এর তালু, মুখমন্ডল থেকে শুরু করে সমস্ত শরীরই হলুদ বর্ণের হয়ে যেতে পারে। সেই সাথে দুর্বলতা, গা ম্যাজ ম্যাজ করা, বমি বমি ভাব, রুচিহীনতা, পায়খানার রঙ ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, শরীর চুলকানো সহ নানা উপসর্গ থাকাটা জন্ডিস এর নিত্য সঙ্গী।

রক্তে বিলিরুবিন এর মাত্রা বেড়ে গেলে জন্ডিস হয়। রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার অনেকগুলো কারন আছে তাই জন্ডিস হবার কারনও অনেকগুলো। রক্তকণিকা অতিরিক্ত পরিমান ভেঙ্গে যাওয়া, পিত্তনালীতে পাথর/টিউমার/ক্রিমি বা অন্য কারনে বাধার সৃষ্টি হওয়া, যকৃত বা লিভারের জন্মগত কিছু ত্রুটি, লিভার প্রদাহ বা হেপাটাইটিস হওয়া সহ নানাবিধ কারনে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।

যেহেতু জন্ডিস রোগের কারণ অনেকগুলো তাই কারণ নির্ণয় ও রোগের অবস্থা জানার জন্য রোগীকে অনেকগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হয়। এর মধ্যে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা ও ধরণ, লিভার এনজাইম, ভাইরাল মার্কার, প্রথমবিন টাইম থেকে শুরু করে আলট্রাসনোগ্রাম, সিটি স্ক্যান এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে বায়োপসি বা কোলাঞ্জিওগ্রাম ও করা লাগতে পারে।

এতোক্ষনে নিশ্চয়ই পাঠকের বোঝা হয়ে গেছে যে সব ধরনের জন্ডিস এর চিকিৎসা এক হবেনা, ঠিক তাই। ঠিক যে কারনে জন্ডিস হয়েছে তা নির্ণয় করে সেই কারনটির চিকিৎসা করাই হলো জন্ডিস চিকিৎসার মূল লক্ষ্য। যেমন কিছু কিছু প্রকৃতির জন্ডিস হলে তার কোনো চিকিৎসারই প্রয়োজন নেই (যেমন গিলবার্ট ডিজিজ), তেমনি কিছু জন্ডিস শুধু বিশ্রাম নিলেই ভালো হয়ে যায়, কিছু আবার কোনো চিকিৎসাতেই ভালো হয়না, তেমনি কিছু আছে অপারেশন করলে একদম পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়। তাই নিজে নিজে বেশী করে পানি খাওয়া, আখের রস খাওয়া বা রোদে না গিয়ে বিশ্রাম নেয়া ইত্যাদি জাতীয় চিকিৎসা না নিয়ে সকলের উচিত চিকিৎসকের কাছ থেকে এ রোগের সঠিক কারণ ও প্রতিকার জেনে নেয়া। জন্ডিস এর অন্যতম কারন হেপাটাইটিস ‘এ’ এবং ‘বি’ এর টিকা নিয়ে এ রোগের হাত থেকে অতি সহজেই বাঁচা যায়, তাই চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নেয়া উচিত আপনি এই টিকা নিতে পারবেন কিনা।

Related posts

Leave a Comment