কিডনি রোগ: শুরুতে শনাক্ত করলে প্রতিরোধ সম্ভব

কিডনি যখন নিজস্ব কোনো রোগে আক্রান্ত হয়, অথবা অন্য কোনো রোগে কিডনি আক্রান্ত হয়, যার ফলে কিডনির কার্যকরতা তিন মাস বা ততধিক সময় পর্যন্ত লোপ পেয়ে থাকে, তখন তাকে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ বলা হয়। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে যদি কিডনি রোগ ছাড়াও কিডনির কার্যকরতা লোপ পায়, তাহলেও তাকে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ বলা যেতে পারে। যেমন, ক্রনিক নেফ্রাইটিস কিডনির ফিল্টারকে আক্রমণ করে ক্রমান্বয়ে কিডনির কার্যকরতা কমিয়ে ফেলতে পারে। ফলে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ হতে পারে। ঠিক তেমনি ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ কিডনি রোগ না হওয়া সত্ত্বেও কিডনির ফিল্টার/ছাঁকনি ধ্বংস করতে পারে। আবার কারও যদি জন্মগতভাবে কিডনির কার্যকরতা কম থাকে, অথবা কিডনির আকার ছোট বা বেশি বড় থাকে, তাহলেও দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ হতে পারে।

কী এই কিডনির ছাঁকনি
মানুষ জন্মগ্রহণ করার ছয় সপ্তাহের মধ্যেই কিডনির ছাঁকনি বা ফিল্টার মেমব্রেন পুরোপুরি তৈরি হয়ে যায়। অর্থাৎ কিডনি পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিটি কিডনিতে প্রায় ১০-১২ লাখ ছাঁকনি রয়েছে এবং প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ১৭০ লিটার রক্ত পরিশোধন করে। এই পরিশোধিত রক্তের মধ্যে এক থেকে তিন লিটার শরীরের বর্জ্য পদার্থ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেওয়া হয়। সুতরাং কোনো কারণে যদি এ ধরনের ফিল্টার বাধাপ্রাপ্ত হয়, তখন দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ হতে পারে।
কিডনির কার্যকরতা যাচাই করার জন্য রক্তে ক্রিয়েটিনিন নামের জৈব পদার্থ পরিমাপ করা হয়, যার মাধ্যমে কিডনি কতটুকু কাজ করছে তা বোঝা যায়। দুঃখজনক বিষয় হলো, এই জৈব পদার্থটি ৫০ শতাংশ কিডনির কার্যকরতা নষ্ট হওয়ার পরই শরীরে বাড়তে পারে। একজন সুস্থ পুরুষ লোকের শরীরে ক্রিয়েটিনিন ১ দশমিক ৪ মিলিগ্রাম এবং একজন মহিলার শরীরে ১ দশমিক ৩ মিলিগ্রাম হিসেবে স্বাভাবিক ধরা হয়। যদি এই ক্রিয়েটিনিন পুরুষের ক্ষেত্রে ১ দশমিক ৪ মিলিগ্রামের ওপরে তিন মাস বা ততধিক কাল স্থায়ী থাকে, তখন তাকে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়।

দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের জটিলতা
দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের সবচেয়ে অসুবিধা হলো, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের রোগীর কোনো উপসর্গ হয় না। ফলে বছরের পর বছর এরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় না। যখন তাদের উপসর্গ দেখা দেয়, তখন তাদের কিডনির কার্যকরতা ৭৫ শতাংশ লোপ পায়। ফলে ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করে পরিপূর্ণ সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। কিডনি যখন ক্রমান্বয়ে সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়ে, তখন তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে যদি দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ নিরূপণ করা যায়, তাহলে চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগগুলোকে আংশিক বা পরিপূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব হতো। সুতরাং কেউ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে ভুগছে কি না, এ জন্য জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি অত্যন্ত জরুরি।

দরকার নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা
শুধু সচেতনতার মাধ্যমেই একজন রোগীর কিডনিতে সমস্যা আছে কি না, তা জানা সম্ভব। যেমন, যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক লোকের উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক, তাঁর রক্তচাপ নিয়মিত পরিমাপ করা, প্রস্রাবে অ্যালবুমিন নির্গত হচ্ছে কি না, তা জানা এবং ডায়াবেটিস আছে কি না, তা নিরূপণ করা প্রয়োজন। যদি কারও ডায়াবেটিস থাকে, তাকে অন্তত বছরে একবার প্রস্রাবে অ্যালবুমিন এবং মাইক্রো অ্যালবুমিন যাচ্ছে কি না এবং রক্তে ক্রিয়েটিনিন স্বাভাবিক কি না, তা পরীক্ষা করা প্রয়োজন। উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য।

কিডনি রোগের ভয়াবহতা
বেশির ভাগ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের কোনো উপসর্গ হয় না। তাই এ ধরনের রোগীরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় না। সুতরাং দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের উপসর্গগুলো সম্পর্কে সবার ধারণা থাকা প্রয়োজন। যদিও দীর্ঘস্থায়ী কিডনি অকেজো রোগে বমি বমি ভাব, ক্ষুধামন্দা, রক্তস্বল্পতা, শরীরে পানি জমা, শ্বাসকষ্ট এবং প্রস্রাবের পরিমাণে তারতম্য, চর্মরোগ ছাড়াই শরীর চুলকানো এবং ক্রমান্বয়ে দৈনন্দিন কার্যকরতা লোপ পাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। আমাদের দেশে ৮০ শতাংশ রোগী এই উপসর্গগুলো নিয়েই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় এবং রক্ত পরীক্ষায় দেখা যায়, কিডনির ৮০ ভাগ কার্যকরতাই তখন নষ্ট হয়ে গেছে। দীর্ঘস্থায়ী কিডনি অকেজো হওয়ার ফলে উপরিউক্ত উপসর্গ ছাড়াও শরীরে অনেক জটিলতা দেখা দেয়। তার মধ্যে প্রধান হলো হূৎপিণ্ডের রোগ।

কিছু সমীক্ষা…
বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে, যারা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি অকেজো রোগে ভোগে, তাদের হূৎপিণ্ডে রোগের আশঙ্কা ১০ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশও ছাড়িয়ে যেতে পারে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি অকেজো রোগীরা ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে, ২৫ শতাংশ হার্ট স্ট্রোকে এবং ২০ শতাংশ হার্ট ফেইলিওর রোগে ভুগে থাকে। ৭৫ শতাংশের হূৎপিণ্ডের প্রকোষ্ঠ বড় হয়ে যায় এবং ছয় শতাংশের ক্ষেত্রে ব্রেইন স্ট্রোকের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। আর ডায়াবেটিসজনিত কিডনি রোগের কারণে উপরিউক্ত হার আরও বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া কিডনি অকেজো রোগীরা সর্বদাই রক্তস্বল্পতায় ভুগে থাকে, যা পরবর্তীকালে হূৎপিণ্ডের প্রকোষ্ঠের আকার বড় করে হার্ট ফেইলিওর করতে পারে। এ ছাড়া এদের রক্তে চর্বিতে ভারসাম্য থাকে না এবং ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাব হয়।

দেশে এক কোটি ৮০ লাখ কিডনি রোগী
বাংলাদেশে কিডনি ফাউন্ডেশন ও বিএসএমএমইউয়ের উদ্যোগে সাভারের চাকুলিয়া গ্রামে তিন বছর ধরে কতজনের দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ রয়েছে, তার ওপর গবেষণা চালানো হচ্ছে। তিন হাজার প্রাপ্তবয়স্ক লোকের ওপর চালানো এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় ১৮ শতাংশ মানুষ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত। এদের মধ্যে ১৩ শতাংশ রোগীর রক্তে ক্রিয়েটিনিন স্বাভাবিকের চেয়ে ওপরে অর্থাতৎ তাদের কিডনির কার্যকরতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৩ সালে ১৫ হাজার ৬২৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের ওপর সমীক্ষায় দেখা যায়, এদের ১১ শতাংশ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত। অস্ট্রেলিয়ায় এই সংখ্যা ১৬ শতাংশ এবং আইসল্যান্ডে ১০ শতাংশ। এই সমীক্ষা থেকে এটা প্রতীয়মান হয়, বর্তমানে প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ লোক দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে ভুগছে।

প্রতিবছর মারা যায় ৪০ হাজার
বিভিন্ন হাসপাতালের পরিসংখ্যান থেকে এটা ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার রোগী কিডনি সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে মারা যায়। এই ঊর্ধ্বহারে কিডনি অকেজো হওয়ার কারণ হিসেবে নেফ্রাইটিস, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপকেই দায়ী করা হয়ে থাকে। নেফ্রাইটিস রোগের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার জন্য ব্যাকটেরিয়াজনিত ইনফেকশন, ভাইরাল হেপাটাইটিস, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর ও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে দায়ী করা হয়। খাবারে রাসায়নিক পদার্থ মেশানো ও ভেজাল, ক্রনিক ইন্টারস্টেশিয়াল নেফ্রাইটিসকে এর কারণ হিসেবে দায়ী করা যেতে পারে। এমনকি পানিতে অধিক পরিমাণে আর্সেনিক কিডনি রোগের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিতে পারে। মার্কারি, লেড, গোল্ড ও অন্যান্য ধাতব পদার্থ কিডনি রোগের কারণ হতে পারে। হেপাটাইটিস ‘বি’ এবং ‘সি’ ভাইরাস এইচআইভি ভাইরাস দক্ষিণ আফ্রিকাতে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের একটি বড় কারণ। ঠিক তেমনি ম্যালেরিয়া আফ্রিকা মহাদেশে কিডনি রোগের কারণ হিসেবে বিবেচিত।

কিডনি অকেজো রোগীর চিকিৎসা
কিডনি সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে গেলে শুধু ওষুধের মাধ্যমে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয় না। রোগীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন হয় নিয়মিত ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি সংযোজন। বর্তমান বিশ্বে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করে একজন রোগী পাঁচ থেকে ১৫ বছর এবং সফল কিডনি সংযোজনের মাধ্যমে ১০-১৫ বছর স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। পৃথিবীতে নিয়মিত হেমোডায়ালাইসিসের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩০ বছর পর্যন্ত রোগী বেঁচে আছে এবং সফল কিডনি সংযোজনের ক্ষেত্রে প্রায় ৩৩ বছর বেঁচে থাকার রেকর্ড রয়েছে। (নিয়মিত ডায়ালাইসিস বলতে সপ্তাহে তিনবার চার ঘণ্টা করে হেমোডায়ালাইসিস মেশিনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা বোঝায়।) ঠিক তেমনি নিকটাত্মীয়ের কিডনি নিয়ে প্রতিস্থাপনকে কিডনি সংযোজন বোঝায়। অবশ্য উন্নত বিশ্বে মৃত ব্যক্তির কিডনি নিয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কিডনি সংযোজন করা হয়ে থাকে।

কিডনি রোগ শনাক্ত করা দরকার
বর্তমানে উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ কীভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব, তা নিয়ে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। গ্রাম ও শহর পর্যায়ে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ শনাক্ত করে তা চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে গ্রাম পর্যায়ের চলমান গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৮ শতাংশ, যাদের মধ্যে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশেরই উচ্চ রক্তচাপ, পাঁচ শতাংশ ডায়াবেটিস এবং ছয় শতাংশের প্রস্রাবে প্রোটিন নির্গত হয়। উল্লিখিত পাঁচ শতাংশ ডায়াবেটিক রোগীর ৩০ শতাংশ এবং ১৮ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপের ১৫ শতাংশ এবং প্রস্রাবে প্রোটিন নির্গত হওয়া ছয় শতাংশ রোগী—সবাই দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত বলে ধারণা করা হয়। ওই সমীক্ষায় রোগীদের প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, তারা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও প্রস্রাবে প্রোটিন নির্গত হওয়া সম্পর্কে জানে কি না। শতকরা ৬০ শতাংশ রোগী জানেই না যে তাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ অথবা প্রস্রাবে প্রোটিন নির্গত হয় এবং তারা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়নি। সুতরাং এই রোগীরাই দীর্ঘস্থায়ী কিডনি অকেজো রোগে ভোগে এবং ক্রমান্বয়ে সম্পূর্ণভাবে কিডনি বিনষ্ট হয়। এই রোগীদেরই শনাক্ত করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিত।

কিডনি রোগ প্রতিরোধের উপায়
এটা পরীক্ষিত যে, এসিই-ইনহ্যাবিটরস এবং এআরবিজাতীয় উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ কিডনি রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকর। ঠিক তেমনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা মাইক্রো-অ্যালবুমিন ধরা পড়লে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা করা প্রয়োজন। এ ছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম, ফাস্টফুড না খাওয়া, চর্বিজাতীয় খাবারের প্রতি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা গেলে কিডনি রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। এ ছাড়া ক্ষেত্রবিশেষে চর্বি নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ খেলে, ধূমপান না করলে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা যায় এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত হূদরোগ থেকেও রেহাই পাওয়া যায়।
কিডনি রোগীদের সচেতন করে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগ শনাক্তকরণের সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে লাখ লাখ কিডনি রোগীর কিডনি সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়া থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাবে। পাশাপাশি কিডনি অকেজো রোগীরা ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজনের বিশাল খরচ থেকে মুক্তি পাবে।

Related posts

Leave a Comment