আহসান সাহেবের পরিবারে বড়ই অশান্তি, তিনি ঘুমের সময় নাক ডাকেন। রিফাত ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্র, তার সমস্যা সেও নাক ডাকে।
রিফাত বা আহসান সাহেব দুজনের একই সমস্যা, একই বিড়ম্বনা। সঙ্গিনীর ভ্রূকুটি, বন্ধুদের উপহাস এসব নিয়ে দুজনেই খুব পেরেশান।
নাক ডাকার কারণ ও তার প্রতিকার নিয়ে হয়েছে বহু গবেষণা, এখনো চলছে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে। সব নিয়েই আজ জানবো আমরা।
হালকা নাক ডাকা অনেকেরই স্বভাব, এটা সাধারনত খারাপ কিছু নয় কিন্তু কিছু কারণ রয়েছে যেগুলো চিকিৎসা দাবী করে:
- জিহ্বা ও আল জিহ্বায় গাঠনিক সমস্যা হলে
- স্থুল ব্যক্তিদের শ্বাসনালীতে মেদ জমে রাস্তা সরু হলে
- ধূমপান বা মদ পানের মাত্রা না থাকলে
- ঘুমের সময় চিত হয়ে ঘুমালে জিহবা ও আল জিহ্বা পেছন দিকে ঝুলে পড়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করলে
- গলার দুপাশের টনসিল বড় হয়ে গেলে
- নাকের ভেতরের দিকে এডেনয়েড বা পলিপ জাতীয় সমস্যার কারনে
- নিচের চোয়ালের গাঠনিক সমস্যা থাকলে
- ঠাণ্ডা লেগে নাক বন্ধ থাকলে
- ঘুমের পিল খেয়ে শ্বাসের মাংসপেশি দুর্বল করে ফেললে
- হরমোনাল সমস্যা যেমন Acromegaly-Gigantism ইত্যাদি সমস্যার কারনে মানুষ নাক ডেকে থাকে।
নাক ডাকার কারণ জানা হল, এবার জানবো এর ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কেঃ
নাসিকা গর্জনের কারনে হতে পারে একটি মারাত্নক সমস্যা যার নাম ‘Obstructive sleep apnoea’ বা ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাসবদ্ধতা।
এ রোগে রোগী নাক ডাকবেন খুব জোরে, ঘুমের মাঝে বেশ কয়েকবার শ্বাস বন্ধ হয়ে ঘুম ভেঙে যাবে, রোগী দিনের বেলাতে থাকবেন অত্যধিক ক্লান্ত, মনে হবে যেন এখনই ঘুমিয়ে পড়বেন যেকোনো মুহূর্তে।
বাসার মানুষের ঘুমে ব্যাঘাত, সঙ্গিনী বা সঙ্গীর বিরক্তি উৎপাদন করা, কাজের সময় অতিরিক্ত দুর্বলতা ইত্যাদি সমস্যা কিন্তু নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়।
চিৎ হয়ে ঘুমানোর থেকে পাশ ফিরে ঘুমালে নাক কম ডাকবেন, কমাতে হবে ওজন, রাতের খাওয়া হবে মাঝারি।চেষ্টা করবেন প্রতিদিন যেন একই সময়ে বিছানায় যেতে পারেন।
ঘুমের ওষুধ ও এলার্জির ওষুধ আপনার ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করবেন না, মাথার নিচে দিতে পারেন দুটা বালিশ।
পাশ ফিরে ঘুমাতে না পারলে পাজামার পেছনের পকেটে দিয়ে দিন একটা টেনিস বল, দেখবেন বলের কারণে ঘুমন্ত অবস্থাতেও আপনি পাশ ফিরে ঘুমাতে বাধ্য হচ্ছেন।
নাক বন্ধ থাকে অনেকের ঠাণ্ডা সর্দিতে, চেষ্টা করবেন নাক যেন বন্ধ না থাকে।সিগারেটের অভ্যাস বাদ দিন।গান ভালো লাগলে গান বা আবৃত্তি চর্চা করুন।সঙ্গী/সঙ্গিনীকে বলুন নাক ডাকলে পাশ ফিরিয়ে দিতে বা নাক ডাকছেন সেটা জানাতে, এটা বেশ ভালো কাজে দেয়।
ব্যবহার করা যায় C-PAP’ নামক ডিভাইস যা ঘুমের মাঝে শ্বাসনালীতে নিরবিচ্ছিন্ন বায়ু প্রবাহ নিশ্চিত করে, রয়েছে নাকের বাঁকা দেওয়াল সোজা করার সার্জারি।
সম্প্রতি জাপানের বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন এক বিশেষ ধরনের বালিশ যা আপনি নাক ডাকলেই আপনার মাথা দুপাশে নাড়িয়ে দেবে।
নাসিকা গর্জন আমরা কেউই পছন্দ করি না। আমাদের আজকের প্রচেস্টা ছিলো আপনাদেরকে কিছুটা হলেও এর থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করা। কারো উপকারে আসলেই আমাদের এই প্রচেস্টা সার্থক। সকলের ঘুম হোক নির্বিঘ্ন ও প্রশান্তির।
ডা. রায়হান কবীর খান