কোনো রোগকে ঘিরে যখন অনেকগুলো উপসর্গ এক সাথে বিরাজ করে তাকে সিনড্রম বলা হয়। নেফ্রোটিক সিনড্রম কিডনির এমনই অনেক গুলো উপসর্গের সমন্বয় যা অনেক গুলো রোগের কারনে হতে পারে, কিন্ত উপসর্গগুলো সব সময় একসাথে থাকে আর এর চিকিৎসা পদ্ধতিও একই। তা হলে প্রশ্ন আসতেই পারে নেফ্রটিক সিনড্রম হলে কি হয়। আসলে কিডনির যে যে রোগে প্রসাবে প্রচুর প্রোটিন যায়, রক্তে প্রোটিনের মাত্রা অনেক কমে যায় আর কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেক বেড়ে যায় এবং সেই সাথে সমস্ত শরীরে পানি জমে ফুলে যায় তাকে এক কথায় নেফ্রটিক সিন্ড্রম বলে।
এবার তাহলে জানা যাক কি কি কারনে এই সিনড্রম হতে পারে – একেতো কিডনির ছাকুনির মতো অঙ্গানু বা গ্লোমিউরুলাসের নানা প্রকার প্রদাহের কারনে এ রোগ হতে পারে, এছাড়া সমস্ত শরীর জুড়ে হয় যেমন এস,এল,ই(SLE); পি,এ,এন(PAN), ডায়াবেটিস, এমাইলয়ডোসিস এসব কারনেও এমনটি হতে পারে। এছাড়া ম্যালেরিয়া, হেপাটাইটিস ‘বি’, হৃদপিন্ডের এন্ডোকার্ডাইটিস জাতীয় ইনফেকশন, কিছু ক্যান্সার, কিছু অসুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এমনকি জন্মগত কারনেও নেফ্রটিক সিনড্রম হতে পারে।
এই সিনড্রম হলে মুখ-মন্ডল ও চোখের পাতা ফুলে ঢলঢলে হয়ে যায়, শরীরের সমস্ত স্থানে পানি জমে (যেমন পেটে পানি জমে এসাইটিস, বুকে জমে প্লুরাল ইফিউশান) শরীর ফুলে যায়, তবে এ রোগে রোগীর রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক থাকে। অনেক সময় এ রোগে রোগীর ইনফেকশন হবার হার বেড়ে যায়, থ্রম্বোএমবোলিজম হয় আবার কখনো কখনো রোগী শক (Hypovolumic shock) এও চলে যেতে পারে। এমন কিছু হলে রোগীকে সাথে সাথে কিডনি বিশেষজ্ঞ বা নেফ্রলজিষ্টের তত্ত্বাবধানে ভর্তি করিয়ে দেয়া উচিত। তিনি এ রোগের সঠিক কারন নির্ণয়ে প্রসাব ও রক্তের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা, এক্সরে এবং কখনো কখনো এন্টিনিউক্লিয়ার ফ্যাক্টর এমনকি রেনাল বায়োপসিও করিয়ে থাকেন।
নেফ্রটিক সিনড্রম হলে রোগীকে লবন এবং তরল জাতীয় খাবার পরিমান কমিয়ে আনতে হয়, এক্ষেত্রে রোগী স্বাভাবিক মাত্রার প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাবার খেতে পারেন। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীকে এন্টিবায়োটিক, ডাইরেটিক এবং ক্ষেত্র বিশেষে স্টেরয়েড জাতীয় অসুধ দেয়া হয়। নেফ্রটিক সিনড্রম কোনো সাদাসিধে রোগ নয়, তাই যে কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা না করিয়ে সব সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া উচিত। অপরিমিত চিকিৎসার কারনে রোগীর রেনাল ফেইলুর, রিকেট, পেরিটনাইটিস ইত্যাদি রোগ হবার সম্ভাবনা আছে।