কিডনির অসুখ সারাতে টেলি মেডিসিন কার্যক্রম শুরু

দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। প্রতিবছর কিডনি বিকল হয়ে মারা যাচ্ছে কয়েক হাজার মানুষ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, এদেশে প্রতি সাতজনে একজন কোনো না কোনো ধরনের কিডনি রোগে আক্রান্ত। তাই এ রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেয়ার কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে কিডনি ফাউন্ডেশন টেলি মেডিসিন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কিডনি রোগীদের সরাসরি চিকিৎসাসেবা দেবেন। কিডনি রোগীরা গ্রামাঞ্চলে ঘরে বসে থেকে এই চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারবেন।
বাংলাদেশের কিডনি রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থা, আক্রান্ত হওয়ার কারণ ও এ রোগ থেকে নিরাময়ে বর্তমান সময়ের আধুনিক চিকিৎসা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, সরকারি কিডনি চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি বেসরকারিভাবে কিডনি ফাউন্ডেশন ডায়ালিসিস ও সংযোজন করে চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এ ছাড়া, কিডনি সংযোজনে সফলতার হার কম নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিডনি ফাউন্ডেশন ২০০৩ সালের অক্টোবর থেকে চিকিৎসাসেবা শুরু করেছে। এই পর্যন্ত কিডনি বিকল রোগীদের মধ্যে ১৩৯ জনের কিডনি সংযোজন করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৯২ ভাগ রোগী সুস্থ আছেন। অর্ধ লক্ষাধিক রোগীকে কিডনি ডায়ালিসিস করা হয়েছে। এই চিকিৎসাসেবা অব্যাহতভাবে চলছে।
তবে চাহিদা অনুযায়ী কিডনি রোগীর জন্য সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা সীমিত জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে প্রায় এক কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। প্রতি বছর তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক রোগীর কিডনি বিকল হয়ে যায়। তবে কিডনি রোগীদের এখন আর বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই জানিয়ে তিনি বলেন, কিডনি ফাউন্ডেশন ডায়ালিসিস ও সংযোজনসহ সব ধরনের আধুনিক চিকিৎসাসেবা স্বল্পমূল্যে দিয়ে যাচ্ছে এবং অনেক কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী কিডনি সংযোজন করে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করছে।
কিডনি রোগে আক্রান্ত ও পরে তা নষ্ট হওয়ার প্রধান কারণ সম্পর্কে কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুস সামাদ বলেন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, বিভিন্ন ওষুধ সেবন, বিশেষ করে ব্যথানাশক ও এন্টিবায়োটিক ওষুধ সেবনে বেশি কিডনি নষ্ট হয়। এ ছাড়া ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্যসামগ্রী খাওয়ার কারণে কিডনি রোগী বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে জানান তিনি। এইসব বিষয়ে জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেভাবে এদেশে কিডনি রোগ প্রতিবছর বাড়ছে তাতে করে ২০২০ সালে এই পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। দেশে সরকারি ও বেসরকারিভাবে আধুনিক কিডনি চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে উঠলেও চাহিদার তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল বলে তিনি জানান।
জাতীয় অধ্যাপক ডা. নূরুল ইসলাম বলেন, এলার্জিসহ নানা কারণে মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হয় এবং এই হার গ্রামাঞ্চলে বেশি হলেও রোগী চিকিৎসাসেবা সেভাবে পাচ্ছে না। ৯০ ভাগ রোগীই চিকিৎসার সামর্থ্যরে অভাবে মারা যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিকল কিডনি রোগীদের হোমো ডায়ালিসিস বা সংযোজন অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এর প্রেক্ষাপটে এই সব রোগীকে নিয়মিত এমবুলেটরি পেরিটোনিয়াল ডায়ালিসিস (সিএপিডি) চিকিৎসা যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে। এই পদ্ধতি কার্যকর করা গেলে এ দেশের হাজার হাজার কিডনি অকেজো রোগী দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারবে।

Related posts

Leave a Comment