হারানো চোখের সৌন্দর্যে

মানুষের চোখে প্রতিফলিত হয় ব্যক্তিত্ব, দুঃখ-কষ্ট আরও কত কী। মানুষের সৌন্দর্যের একটা বড় অংশ জুড়েই রয়েছে এই চোখ।
এই মূল্যবান চোখ যদি কোনো আঘাত, দুর্ঘটনা বা জটিল কোনো রোগের জন্য হারাতে হয় তাহলে সেই মানুষটির যে কষ্টের আর শেষ থাকে না। চোখ না থাকার কারণে হীনম্মন্যতায় ভুগে রোগী ছেড়ে দেয় লেখাপড়া, খেলাধুলা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সব সামাজিক কাজকর্ম।
সবার মাঝে নিজেকে খুব একা ও নিঃসঙ্গ ভাবতে থাকে। তাই অনেকে কালো চশমা পরে সবার মাঝ থেকে আড়াল করে রাখতে চায় নিজেকে। কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই যুগে আমাদের মধ্যে আশার আলো জ্বেলে দিয়েছে একটি কাসটম মেইড কৃত্রিম চোখ। এই কৃত্রিম চোখের দৃষ্টিশক্তি নেই, কিন্তু এই চোখ রোগীর হতাশা, কষ্ট আর নিঃসঙ্গতাকে মুছে দিয়ে তাকে ফিরিয়ে দিতে পারে হারানো সৌন্দর্য ও একটি সুস্থ, স্বাভাবিক জীবন।
তাই একটি সুন্দর ও ব্যক্তিত্বময় জীবনের কামনায় বাংলাদেশে এখন সর্বাধুনিক কাসটম মেইড কৃত্রিম চক্ষু প্রতিস্থাপন করা হয়।
যে কারণে কৃত্রিম চক্ষু প্রতিস্থাপন:
সময়মতো সঠিক মাপের কৃত্রিম চক্ষু ব্যবহার না করার ফলে চক্ষুকোটর চারপাশের মাংসপেশি দ্বারা সংকুচিত হয়ে যায়, ফলে সঠিক মাপের কৃত্রিম চক্ষু প্রতিস্থাপনের জন্য তা অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তাই চক্ষু হারানোর সঙ্গে সঙ্গে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি সঠিক মাপের ও রঙের আসল চোখের মতো দেখতে (অন্য কেউ বুঝতে পারবে না এমন) একটি কৃত্রিম চোখ প্রতিস্থাপন করা উচিত।
সর্বসাধারণের কথা চিন্তা করে রেডিমেড কৃত্রিম চক্ষু বা পাথরের চোখ তৈরি করা হয়। কিন্তু তা আলাদা আলাদা রোগীর চক্ষুকোটরের মাপমতো হয় না এবং কৃত্রিম চোখটি ছোট-বড় হয়ে যায়, যা প্রতিস্থাপন করলে কৃত্রিমই মনে হয়। কিন্তু একটি কাসটম মেইড কৃত্রিম চোখ রোগীর চক্ষুকোটরের মাপ নিয়ে তৈরি হয়, ফলে তা পাশের চোখের সমান। স্বাভাবিক নড়াচড়া করতে সক্ষম এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন।
প্রতিটি ব্যক্তির আইরিশ/চোখের মণির রং এবং সাইজ ভিন্ন, যা রেডিমেড কৃত্রিম চক্ষুতে হয় না। কিন্তু কাসটম মেইড কৃত্রিম চক্ষু ব্যক্তির আসল চোখের মণির রং ও সাইজ সম্পূর্ণভাবে মিলিয়ে তৈরি করা হয়।
কাসটম মেইড কৃত্রিম চক্ষু স্ক্লেরা বা সাদা অংশের রং পাশের চোখের সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করা হয়, যা ব্যক্তিবিশেষে সাদা, নীলাভ সাদা, লালাভ সাদা, বাদামি বা হলুদাভ হয়ে থাকে। রেডিমেড কৃত্রিম চক্ষু সাধারণত সাদাই হয়।
কাসটম মেড কৃত্রিম চক্ষুতে ক্যাপেলারি বা রক্তজালিকা বিন্যাস পাশের চোখের সঙ্গে মিল রেখে প্রতিস্থাপন করা হয়, যা রেডিমেড চক্ষুতে তেমন পাওয়া যায় না। বর্তমানে বাংলাদেশে সর্বাধুনিক কৃত্রিম চক্ষু প্রতিস্থাপন বিষয়ে যেসব চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে তা হলো:
১. কাসটম মেড অকিউলার প্রোসথেসিস কৃত্রিম চক্ষু প্রতিস্থাপন:
বর্তমানে বাংলাদেশে সর্বাধুনিক মানের যে কৃত্রিম চক্ষু পাওয়া যায় তা শুধু নির্দিষ্ট রোগীর চক্ষুকোটরের মাপ নিয়ে আসল চোখের সমান, একই রঙের ও সাইজের আইরিশ বা চোখের মণি, রক্তজালিকা বিন্যাসসহ স্ক্লেরা বা চোখের সাদা অংশের সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করা হয়। এটা স্বাভাবিক, নড়াচড়া করতে সক্ষম ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন। জার্মানি অ্যাক্রিলিক ফাইবার দ্বারা তৈরি বলে এটি হালকা ও উন্নতমানের।
২. অরবিটাল প্রোসথেসিস (কৃত্রিম চক্ষু, চোখের পাতা, চোখের পাপড়ি প্রতিস্থাপন):
দুর্ঘটনা বা ক্যানসারের জন্য চোখ, চোখের পাতা, চোখের পাপড়ি, আইভ্রু অপারেশন (এক্সেনটারেশন) করে ফেলে দিতে হয়। এসব ক্ষেত্রে কৃত্রিমভাবে রোগীর ত্বকের রঙের সঙ্গে মিল রেখে (সিলিকন বেজড) চোখ, চোখের পাতা, পাপড়ি ও আইভ্রু প্রতিস্থাপন করা হয়।
৩. রেলিনেবল চিলড্রেন অকিউলার প্রোসথেসিস: শিশু রোগীদের ক্ষেত্রে তাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চক্ষুকোটরও বড় হয়। তাই শিশুদের কৃত্রিম চক্ষু এমনভাবে তৈরি, যা ক্রমবর্ধমান চক্ষুকোটরের মাপমতো নতুন চক্ষু না বানিয়ে বৃদ্ধি করা যায় বছরান্তে।

Related posts

Leave a Comment