তৃণমূল পর্যায়ে সরকারী চিকিৎসক ও চিকিৎসাসেবার করুণ অবস্থা বিরাজ করছে। চিকিৎসা দেয়ার অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি নেই। সেবাদানকারীরা সময় মতো কর্মক্ষেত্রে হাজির হন না। নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের শতকরা মাত্র ৫৭ ভাগ সেবাদানকারী দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের অনেকে কর্ম দিবসের পূর্ণ সময় সেবা প্রদান করেন না। স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটির গবেষণা প্রতিবেদনে এ চিত্র ফুটে উঠেছে।
দেশের ১৩টি জেলার ৩৭টি উপজেলায় ‘তৃণমূল পর্যায়ে সরকারী চিকিৎসক ও চিকিৎসা’-এর ওপর গবেষণা পরিচালনা করে স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক এলাকায় চিকিৎসকের শতকরা ২০ ভাগ, নার্সের ১৯ ভাগ ও স্বাস্থ্যকর্মীর ৭ ভাগ এবং অন্য কর্মচারীর ১৯ ভাগ পদ শূন্য হয়ে আছে। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সেবাদানকারীদের সকলেই কাজে যোগদান করেছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে যথাস্থানে দায়িত্ব পালন করছেন শতকরা মাত্র ৫৭ ভাগ। তাদের অনেকেই আবার কর্ম দিবসের পূর্ণ সময় সেবা প্রদান করেন না। অনেক এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মীরা দায়িত্ব পালন করেন না। নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের অনেকে কর্মস্থল থেকে অন্য পেশায় চলে গেছেন। তাঁদের অনেকের বিভাগ ও জেলা শহরে থাকার মানসিকতাই বেশি। তাঁরা গ্রামাঞ্চলে মন বসাতে পারেন না। চাহিদার তুলনায় মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি কম থাকায় সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব হয় না। থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ব্যবস্থাপত্রে অবহেলার চিত্র ফুটে ওঠে। ছোট একটি কাগজের টুকরোয় প্রেসক্রিপশন করা হয়, যেখানে রোগীর নাম ও বয়স লেখার পর বর্ণনা ও ওষুধের নাম, মাত্রাসহ বাড়তি কিছু লেখার জায়গা থাকে না। এতে সঠিকভাবে ওষুধ ও রোগের নামসহ অন্য ডাক্তারী নির্দেশনা দেয়া সম্ভব হয় না। উক্ত ব্যবস্থাপনা রোগীর ফলোআপ কাজে আসে না। রোগী ও তাঁর অভিভাবকরা তা সংরৰণ করেন না।
কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে এখনও স্থায়ীভাবে কোন সেবা প্রদানকারী নিয়োগ দেয়া হয়নি। ইউনিয়ন ও উপজেলা থেকে অনিয়মিতভাবে সেবা প্রদানকারীরা সেখানে সেবা প্রদান করে থাকেন।
স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব জানান, স্থানীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং মনিটরিং ব্যবস্থা নিয়মিত ও জোরালো করা উচিত। নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের কর্মস্থলে অবস্থান করে চিকিৎসাসেবা প্রদানের মানসিকতা সৃষ্টির জন্য সময়োপযোগী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। সেবাকেন্দ্র এলাকার জনগণ ও সেবা প্রদানকারী দ্বারা প্রস্তুতকৃত কার্যকর সিটিজেন চার্টার তৈরি করা উচিত। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে দ্রুত জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা করা দরকার।
অধ্যাপক আবম ফারুক বলেন, সভা-সেমিনার দিয়ে গরিব মানুষের পুষ্টির যোগান দেয়া সম্ভব নয়। স্বাস্থ্যসেবার জন্য স্বাস্থ্যনীতির অপেক্ষায় থাকা ঠিক নয়। কিছু কিছু উদ্যোগ খুব দ্রুতগতিতে নেয়া সম্ভব।