সাধারনত শীতকালে এলার্জি জনিত হাঁপানী রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। এজমার অ্যাটাকও হয় বেশি। শীতের শুস্ক মওশুমে কিছু এলার্জেন ও শ্বাসনালীর উত্যক্তকারী বস্তু নিশ্চিতভাবেই বেশি থাকে আমাদের চারপাশের পরিবেশে । ঘরের ভেতর ঘরোয়া জীবাণু মাইট, ছত্রাক, পোকা মাকড়ের বিষ্ঠা। বাতাসে ঘাসের বা ফুলের রেণু। এছাড়া থাকে শ্বাসনালীর উত্যক্তকারী কিছু পদার্থ, যেমন ঠান্ডা বাতাস, ধোঁয়া ও ধূলাবালি। শীতের শুস্ক মওশুমে মাটিতে এবং বাতাসে ধূলাবালি থাকে খুব বেশি। রাস্তায় একটা গাড়ি চলে গেলে বাতাস ধূলায় ভরে যায়। ফলশ্রুতিতে শীতকালে এলার্জি জনিত এজমা হয় বেশি। শীতের প্রচন্ডতায় ঘরে বসে থাকার সময় রান্নাবান্নার ধোঁয়া বা সিগারেটের ধোঁয়া হাঁপানির প্রকোপ আরও বাড়িয়ে দেয়।
এলার্জি জনিত হাঁপানি হলে যে সব লক্ষণ দেখা দেয় সেগুলোর মধ্যে আছে: মুখে ও গলায় খুস্খুস্ করা, কাশি হওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া, বুকে চাপ অনুভব করা। শ্বাস প্রশ্বাসের সময় গলায় শোঁ শোঁ শব্দ হওয়া। হাঁচি, কাশি, নাক ঝরা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, ইত্যাদি উপসর্গও দেখা দিতে পারে। নাক চুলকায় বলে শিশুরা হাত দিয়ে নাক ঘসতে পারে উপরের দিকে। এলার্জি জনিত কারণে নাক থেকে শুরু করে ফুসফুস পর্যন্ত শ্বাস তন্ত্রে প্রদাহ হয়। ফলে শ্বাসনালীর ভেতরের দিক কিছুটা ফুলে যায় এবং শেস্নষ্মা উৎপন্ন হয়। শীতের শুস্ক বাতাসের জন্য এই শেস্নষ্মা আরও গাঢ় হয়। ফলে শ্বাসনালী সরু হয়ে যায়। শ্বাস টানতে বা ছাড়তে কষ্ট হয়।
শীতকালে বাইরের তাপমাত্রা এবং শরীরের ভিতরের তাপমাত্রার মধ্যে বেশ পার্থক্য থাকে। শরীরের ভিতরে ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস, আর বাইরে হয়ত পনের ষোল ডিগ্রী। শ্বাসনালীতে ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ করলে তাপমাত্রার এই পার্থক্যের কারণে শ্বাসনালীর খিঁচুনি হয়। বালতি ভর্তি হিমশীতল পানিতে হাত ডুবিয়ে দিয়ে দেখুন না, শরীরটা কেমন কাঁপুনি দিয়ে ওঠে! উউউঃ। ব্যপারটা কিছুটা এরকম। খিঁচুনির জন্য শ্বাসনালী সংকুচিত হয়। ফলে হাঁপানির সূচনা হতে পারে।
প্রতিরোধে করণীয়:
০০ বাড়িঘরের এলার্জেন ও শ্বাসনালীর উত্যক্তকারী বস্তু কমান। ঘর দোরের ধূলা বালি ঝেড়ে মুছে পরিস্কার রাখুন।
০০ ঘরোয়া জীবাণু মাইট কমানোর চেষ্টা করুন। নিয়মিত কাপড় চোপড় ধূয়ে রোদে শুকিয়ে নিন। নিয়মিত রোদে দিন কাঁথা কম্বল, লেপ, তোষক। সপ্তাহে অন্তত একবার। বিছানার চাদর, বালিশের কাভারও।
০০ দরজা জানালার পর্দা, মশারি- এগুলোও নিয়মিত ধূয়ে রোদে শুকিয়ে নিন।
০০ কার্পেট, ম্যাট সরিয়ে ফেলুন।
০০ সম্ভব হলে আপনার ঘর ভ্যাক্যুয়াম ক্লিন করুন সপ্তাহে একবার।
০০ বালিশ ঢেকে রাখুন বিশেষ কিছু দিয়ে।
০০ বাইরে চলাচলের সময় মাস্ক ব্যবহার করুন।
০০ ঘন ঘন হালকা গরম পানি বা স্বাভাবিক পানি পান করুন। এতে শ্বাসনালীতে তৈরি হওয়া শেস্নষ্মা পাতলা থাকবে। তাতে কাশি কমবে, শ্বাসকষ্ট কমবে।
০০ চিকিৎসকের পরাশর্শমত কিছু ওষুধ সেবন করেও হাঁপানি প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
০০ এলার্জি স্কিন টেস্টের মাধ্যমে এলার্জেন সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে সেই এলার্জেন এড়িয়ে চলুন।
এসব কিন্তু হাঁপানির চিকিৎসা নয়, প্রতিরোধ ব্যবস্থা মাত্র। অবশ্য প্রতিরোধ চিকিৎসার চাইতে ভাল।
হাঁপানিতে আক্রান্ত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে পরামর্শমত ওষুধ সেবন করতে হবে।
ডাঃ মোঃ শহীদুলস্নাহ্
বিভাগীয় প্রধান
কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ
কমিউনিটি বেজড্ মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ।