ফুসফুস শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজে সাহায্য করে। আমাদের বুকের বাঁ দিকে রয়েছে হৃৎপিণ্ড। হৃৎপিণ্ডের দুপাশে এদের অবস্থান। এরা সংখ্যায় এক জোড়া।
পেটের ওপর থেকে বুকের সামনের দিকে এদের বিস্তৃতি। আমাদের মেরুদণ্ডের সঙ্গে অসংখ্য ছোট হাড় যুক্ত আছে বুকের সামনের দিকে। এই হাড়গুলোর সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে বক্ষপিঞ্জর। বক্ষপিঞ্জরের মধ্যেই ফুসফুসের অবস্থান। বক্ষপিঞ্জরের ছোট হাড়গুলো ফুসফুসকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে। ফুসফুস লালচে বাদামি বর্ণের। অর্ধকোণাকৃতির বেলুনের মতো এদের গঠন। এদের দেহ স্পঞ্জের মতো। আমরা পরিবেশ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড মিশ্রিত বাতাস নিই। সেই বাতাস নাকের মাধ্যমে ট্রাকিয়ায় (গলার ভেতরে অবস্থিত) যায়। ট্রাকিয়া থেকে ফুসফুসে পৌঁছায়।
ফুসফুস থেকে বাতাস হৃৎপিণ্ডে যায়। হৃৎপিণ্ড সেই বাতাসকে অক্সিজেনযুক্ত করে সারা দেহে পাঠায়। যেকোনো একটা (বাঁ বা ডান পাশের) ফুসফুসকে বলে ‘লাং’ (খৎষব)। আর দুটো ফুসফুসকে একসঙ্গে বলে ‘লাংস’। আর চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে ব্রংকাস বলে। শ্বাস নিলে ফুসফুস বেলুনের মতো ফুলে যায়। আর নাক ও মুখ দিয়ে বাতাস বের করাকে বলে প্রশ্বাস। প্রশ্বাসের সময় ফুসফুস চুপসে যায়। আকারে ছোট হয়ে আসে। গঠনপ্রকৃতি বেলুনের মতো হওয়ায় ফুসফুসকে বলা হয় ‘দেহের বেলুন’। হৃৎপিণ্ডের মতো ফুসফুসও বিরামহীন গতিতে কাজ করতেই থাকে। ঘুমন্ত অবস্থায়ও চলতে থাকে ফুসফুসের পরিশ্রম। প্রতিটি পূর্ণবয়স্ক মানুষ প্রতি মিনিটে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয় ১২ থেকে ১৮ বার। আর শিশুরা নেয় ২০ থেকে ৩০ বার। তবে পরিবেশ-পরিস্থিতি ও মানসিক অবস্থার জন্য এই পরিমাণ বাড়তে বা কমতে পারে।
আমাদের শ্বাস নিতে লাগে দুই সেকেন্ড আর প্রশ্বাসের জন্য প্রয়োজন তিন সেকেন্ড। ফুসফুসের মধ্যে পাতা ঝরে যাওয়া গাছের ডালপালার মতো দেখতে অসংখ্য ছোট নালি রয়েছে। এই নালিগুলোর মাধ্যমে বাতাস ফুসফুস ও সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়। প্রশ্বাসের সময় কার্বন ডাই-অক্সাইড ও সামান্য পরিমাণে পানিসহ আরও কিছু গ্যাস শরীরের বাইরে বের হয়ে যায় (কিছু ক্ষতিকর গ্যাস, যা শরীরের জন্য হুমকিস্বরূপ)।
হৃৎপিণ্ড বাঁ পাশে থাকায় বাঁ ফুসফুস ডান ফুসফুসের তুলনায় ছোট। হৃৎপিণ্ড সঠিকভাবে কাজ করতে না পারলে ফুসফুসের কাজেও ব্যাঘাত ঘটে। কারণ হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের অবস্থান পাশাপাশি এবং এদের কার্যপ্রণালীও পরস্পরের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
ফুসফুসের কাজ
– মস্তিষ্কে বিশুদ্ধ বায়ু প্রেরণে ভূমিকা রাখে।
– নাকের মাধ্যমে ঢুকে যাওয়া অপ্রয়োজনীয় বস্তুকে দেহের বাইরে বের করে দেয়।
ফুসফুসের যত্নে যা করবেন
– ধূমপায়ীদের ফুসফুসের শিরা ও নালিগুলোয় বর্জø দ্রব্য জমে যায় অতি দ্রুত। ফলে বাতাস সঠিকভাবে চলতে পারে না। বছরের পর বছর বর্জø জমে মারাত্মক পরিণতির সৃষ্টি হয়। তাই মাদক ও ধূমপান কখনোই নয়।
– প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগান, এতে পরিবেশে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়বে। ফলে ফুসফুস ও পরিবেশ দুটোই হবে উপকৃত।
– চামড়া, লোহার দোকান বা কারখানার কাছাকাছি বাসায় থাকবেন না।
– ঘরে সূর্যের আলো ও বাতাস প্রবেশের পর্যাপ্ত সুযোগ রাখুন।
– টয়লেটের দরজা সব সময় বন্ধ রাখুন। রান্নাঘর ও টয়লেট থেকে নির্গত গ্যাস বের হওয়ার জন্য সঠিক ব্যবস্থা থাকা জরুরি।
– রান্নাঘরের ময়লা ফেলার পাত্রে অবশ্যই ঢাকনা ব্যবহার করুন।
– সুযোগ হলেই গাছপালাময় সবুজ পরিবেশে বুকভরে দীর্ঘ সময় শ্বাস নিন। কাজে ব্যস্ত থাকলে আমাদের মাথা জ্যাম মনে হয়। সম্ভব হলে কাজ শেষে খোলা আকাশের নিচে ৩০ মিনিট হাঁটুন। এতে মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষে রক্ত ও অক্সিজেনের মাত্রা বাড়বে। ফলে মস্তিষ্ক ও ফুসফুস হবে বেশি কর্মক্ষম।
– অ্যাজমা রোগীরা সব সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলুন।