দেশে প্রথম যকৃৎ প্রতিস্থাপনে বারডেম হাসপাতালের সাফল্য
দেশে প্রথমবারের মতো যকৃৎ প্রতিস্থাপন (লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন) করেছেন বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। চিকিৎসকেরা ইরশাদ আহমেদের (৪২) দেহে জুড়ে দিয়েছেন তাঁরই মামার যকৃতের অংশ। গতকাল মঙ্গলবার (৮ ই মে, ২০১০) সংবাদ সম্মেলন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যকৃৎ প্রতিস্থাপন সফল হয়েছে এবং ইরশাদ ও যকৃৎ দাতা দুজনই সুস্থ আছেন।
বারডেমের প্রধান যকৃৎ প্রতিস্থাপন শল্যবিদ (চিফ লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন) অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের চিকিৎসকদল যকৃৎ প্রতিস্থাপনে অংশ নেন। এই জটিল অস্ত্রোপচারে ভারতের পাঁচ সদস্যের চিকিৎসকদল তাঁদের সহায়তা করেন।
বারডেমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ আলী জানান, ইরশাদ পাঁচ বছর ধরে যকৃতের অসুখে (লিভার সিরোসিস) ভুগছিলেন। ইরশাদকে সুস্থ করতে তাঁর যকৃৎ কেটে ফেলার প্রয়োজন দেখা দেয়। যকৃতের অভাব পূরণে তাঁরই মামা খালেদ আবদুল্লাহর (২৯) যকৃতের একটি অংশ ইরশাদের দেহে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। খালেদ আবদুল্লাহর যকৃতের ডান অংশের ৭৫২ গ্রাম যকৃৎ নেওয়া হয়েছে। ৩ জুন সকাল সাড়ে সাতটায় অস্ত্রোপচার শুরু হয়। প্রায় ১৭ ঘণ্টা এই অস্ত্রোপচার চলে। তিনি বলেন, ইরশাদ নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) এখন সুস্থ আছেন। খালেদ আবদুল্লাহও ওই হাসপাতালেই আছেন, তিনিও সুস্থ আছেন। ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে দুজনই বাড়ি যেতে পারবেন।
চিকিৎসকেরা বলেন, দীর্ঘমেয়াদি যকৃতের অসুখের শেষ পর্যায়ে রোগীর দেহে নানা জটিলতা দেখা দেয়। একসময় যকৃৎ কার্যকরতা হারাতে থাকে। মোহাম্মদ আলী বলেন, এমন একটা সময় আসে, যখন চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন, রোগী এক বছর বা তার কম সময়ের মধ্যে মারা যাবে, তখন জীবন রক্ষাকারী পদক্ষেপ হিসেবে যকৃৎ প্রতিস্থাপনের কথা বিবেচনা করা হয়। রোগীর যকৃতের একটি অংশ কেটে সেখানে সুস্থ মানুষের যকৃতের অংশ জুড়ে দেওয়াই এখন আধুনিক চিকিৎসার অংশ। এটাই যকৃৎ প্রতিস্থাপন। মোহাম্মদ আলী বলেন, মৃত মানুষের যকৃতের অংশ প্রতিস্থাপন করা যায়। তবে মৃত্যুর ১২ ঘণ্টার মধ্যে যকৃতের অংশ অথবা যকৃত সংগ্রহ করে তা ব্যবহার করতে হবে।
অস্ত্রোপচারে আর্থিক সহায়তা করেছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। সংবাদ সম্মেলনে অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে আজাদ খান, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ।
মোহাম্মদ আলী বলেন, যকৃৎ দান করার পর ওই ব্যক্তির অবশিষ্ট যকৃত পুনরায় বাড়তে থাকে। পরবর্তী ছয় থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে তা আগের মতো সম্পূর্ণ কর্মক্ষমতা ফিরে পায়। তিনি বলেন, এভাবে মানুষ যকৃতের অংশ দান করে অন্যের জীবন বাঁচাতে পারে। মোহাম্মদ আলী জানান, যকৃৎ প্রতিস্থাপনের জন্য প্রথমে উভয়ের রক্তের গ্রুপে মিল থাকতে হয়। একই সঙ্গে দাতার সুস্থতা প্রমাণ করতে হয়।
মোহাম্মদ আলী বলেন, ইরশাদের যকৃৎ প্রতিস্থাপনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারে খরচ হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ টাকা। এ অস্ত্রোপচারে কোনো চিকিৎসক সম্মানী বা পারিশ্রমিক নেননি। তবে বারডেম কর্তৃপক্ষ ওই সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, এই হাসপাতালে যকৃত প্রতিস্থাপনে খরচ হবে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা। তাঁরা বলেন, আরও পাঁচজন রোগী যকৃৎ প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষা করছেন।
ওয়েবসাইটে দেখা যায়, ১৯৬৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসক থমাস স্টার্জল সর্বপ্রথম মানবদেহে মৃত মানুষের যকৃত প্রতিস্থাপন করেন। ১৯৮৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসক রাসেল ডব্লিউ স্ট্রং সর্বপ্রথম জীবন্ত মানুষ থেকে যকৃতের অংশ রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করেন। দেশের প্রথম যকৃত প্রতিস্থাপনকারী শল্যবিদ মোহাম্মদ আলী রাসেল ডব্লিউ স্ট্রংয়ের ছাত্র।