উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ

উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের সম্পর্ক কী?
উচ্চ রক্তচাপ বা অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ দীর্ঘ সময় থাকলে হৃদপিণ্ডের রক্তনালিতে চর্বির আস্তর জমে ব্লকেজ হতে পারে এবং রক্তপ্রবাহ বাধা পাওয়ার ফলে Ischemic heart disease হতে পারে, যা হৃদপিণ্ডের একটি ভয়াবহ রোগ।

 উচ্চ রক্তচাপে হৃদপিণ্ডের কী কী ধরনের হূদেরাগ হয়?
উচ্চ রক্তচাপে হৃদপিণ্ডের রক্তনালিতে চর্বির আস্তর পড়ে Ischemic heart disease ছাড়াও হৃদপিণ্ডের দেয়াল মোটা হয়ে হাইপারটেনসিভ হার্ট ডিজিজ, হার্ট ফেইলর হতে পারে।

 রক্তচাপ কী?
রক্ত চলাচলের সময় রক্তনালিতে যে চাপ দেয়, তাকেই রক্তচাপ বলে।

 উচ্চ রক্তচাপ কী?
রক্তচাপ ধমনি, শিরা তথা রক্তনালির আকারের ওপর নির্ভর করে, আর রক্তনালি সংকীর্ণতর হলে শরীরের বিভিন্ন অংশে একই পরিমাণে রক্ত সরবরাহের জন্য হৃদপিণ্ডকে অপেক্ষাকৃত বেশি কাজ করতে হয়। এ রকম অবস্থায় হৃদপিণ্ডকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চাপ দিয়ে রক্ত সরবরাহ বজায় রাখতে হয়। আর এ বেশি চাপ দেওয়ার অবস্থাকেই উচ্চ রক্তচাপ বলে।

 উচ্চ রক্তচাপ কী কী কারণে হতে পারে?
৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সে সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়। পুরুষের উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা ও প্রকটতা নারীদের চেয়ে বেশি। গর্ভকালীন ও জন্মনিরোধক ওষুধ গ্রহণকালে নারীদের উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। যাঁদের ওজন উচ্চতার তুলনায় বেশি, তাঁদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কাও বেশি। পরিবারে কোনো আত্মীয়ের (যেমন: বাবা-মা) উচ্চ রক্তচাপ থাকলেও উচ্চ রক্তচাপ রোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়।

 উচ্চ রক্তচাপ আমাদের শরীরে কী ক্ষতি করে?
উচ্চ রক্তচাপ জীবনের হুমকিস্বরূপ। উচ্চ রক্তচাপ আমাদের শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে যেসব সমস্যা হয় তা হলো—১. স্ট্রোক (মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ), ২. হার্ট অ্যাটাক, ৩. হার্ট ফেইলর, ৪. কিডনির ফেইলর হওয়ার আশঙ্কা থাকে, ৫. চোখের রক্তনালির ক্রমাগত চাপ বাড়ে ও তা স্ফীত হয়ে যায়, ৬. রক্তনালির বাইরে দেয়ালে ক্ষত সৃষ্টি ও শক্ত হওয়া, ৭. রক্তনালির ভেতরের দেয়ালে চর্বি ও অন্যান্য পদার্থ জমে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া এবং ৮. যৌনকাজে অক্ষমতা।

 উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ কী কী?
৫০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা যায় না এবং অন্য কারণে চিকিত্সকের কাছে গিয়ে প্রেশার মাপার পর সহসা উচ্চ রক্তচাপের উপস্থিতি জানা যায়—১. মাথাব্যথা: তীব্র মাথাব্যথা, সকালের দিকে হয়, অল্প কয়েক দিন ধরে হয়, বমি বমি ভাব, ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি কমে আসে; ২. মাথা ঝিমঝিম ভাব; ৩. ঘুম কম হওয়া; ৪. শ্বাসকষ্ট এবং ৫. নাক দিয়ে রক্ত পড়া।

 উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে জীবনব্যবস্থায় কী কী পরিবর্তন করতে হয়?
আজীবন চিকিত্সা চালিয়ে যেতে হবে। সুস্থবোধ করলেই চিকিত্সা বাদ দেওয়া যাবে না। ওজন কমাতে হবে। খাদ্যতালিকায়—অতিরিক্ত সোডিয়াম লবণ, চর্বিযুক্ত মাংস, কোলেস্টেরলসমৃদ্ধ খাদ্য বর্জন করতে হবে। বিশ্রাম নিতে হবে—ঘুমের মাধ্যমে, যোগব্যায়ামের মাধ্যমে কিংবা সবকিছু সহজভাবে গ্রহণ করে বিশ্রাম নেওয়া যাবে। ব্যায়াম করতে হবে, তবে অতিরিক্ত ব্যায়াম করা যাবে না এবং ক্লান্ত হওয়ার আগেই ব্যায়াম বন্ধ করতে হবে। নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে, ডায়াবেটিস থাকলে সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নির্দিষ্ট সময় পর পর চিকিত্সকের সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে হবে, ধূমপান বন্ধ করতে হবে।

 উচ্চ রক্তচাপ থাকলে কি প্রতিদিন প্রেশার মাপতে হবে?
না, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে প্রতিদিন প্রেশার মাপার প্রয়োজন নেই। প্রেশার অনিয়ন্ত্রিত থাকলে প্রথম দিকে এক দিন পর পর, পরে সপ্তাহে এক দিন এবং পরবর্তী সময়ে দুই সপ্তাহে একবার বা মাসে একবার প্রেশার মাপা উচিত।

 উচ্চ রক্তচাপ থাকলে কী কী পরীক্ষার প্রয়োজন আছে?
উচ্চ রক্তচাপ থাকলে উচ্চ রক্তচাপের কারণ নির্ণয় করার জন্য এবং উচ্চ রক্তচাপের প্রভাব দেখার জন্য কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন আছে।

 উচ্চ রক্তচাপের কারণে হূদেরাগ হলে কী কী পরীক্ষার প্রয়োজন?
উচ্চ রক্তচাপের কারণে হূদেরাগ হলে হূদেরাগের মাত্রা নিরূপণের জন্য ইসিজি, ইকো (কালার ডপলার) ইটিটি, সিএক্সআর, পি/এ ভিউ পরীক্ষাগুলো করা প্রয়োজন।

 উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে হূদেরাগ থাকলে কী কী ওষুধ ব্যবহার করা যায়?
উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে অর্থাত্ হৃদপিণ্ডের রক্তনালিতে ব্লক থাকলে আমরা অ্যাসপিরিন-জাতীয় ওষুধ, বিটা ব্লকার ওষুধ, নাইট্রেট-জাতীয় ওষুধ স্ট্যাটিন গ্রুপের ওষুধ ব্যবহার করি।

 উচ্চ রক্তচাপ ও হূদেরাগ, যেমন—হাইপারটেনসিভ হার্ট ডিজিজ অর্থাত্ হৃদপিণ্ডের দেয়াল মোটা হলে কী কী ওষুধ ব্যবহার করা যায়।
উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে হৃদপিণ্ডের দেয়াল মোটা হলে আমরা এসিই ইনহিবিটর বা এ আর বি গ্রুপের ওষুধ দিই।

Related posts

Leave a Comment