হৃদরোগ হচ্ছে তরুণদেরও!

সতর্ক থাকার জন্যই কথাটি বলা।
তরুণসমাজ যেভাবে আজকাল ফাস্টফুড খাচ্ছে, কোমল পানীয় পান করছে, চিপস চিবুচ্ছে, ঢাউস সোফায় বসে বিশাল পর্দায় টিভি দেখছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিমোট কন্ট্রোল হাতে, নড়াচড়া করছেই না-তাদের যে অসুখ-বিসুখ এ বদভ্যাসে হতে পারে, তা না জানালে নিজের কাছেই অপরাধী থেকে যাব। এমন ঘটনা ঘটছে। সে জন্য এ প্রসঙ্গের অবতারণা। পৃথিবী ছোট হয়ে আসার জন্য, যন্ত্রের জগৎ ক্রমে আমাদের গ্রাস করে ফেলার জন্য বিপদ তো বাড়ছেই। আর নতুন যুগের মানুষেরা যন্ত্রের ফাঁদে পড়ছে।
জয়ন্ত সেনের (কাল্পনিক নাম) কথা বলি। ২২ বছরের টগবগে তরুণ। দেখলে তো তা-ই মনে হয়। তবে একদিন বুকে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে এলেন নিজ গৃহে। পেশায় ফিজিওথেরাপিস্ট, তবে ডায়াবেটিস ছিল তাঁর। চিকিৎসা পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকায় ঠিকমতো ধরতে পারলেন যে হৃদরোগের লক্ষণ হতে পারে তা। আর ডায়াবেটিক রোগী যে হৃদরোগের বড় ঝুঁকিতে থাকে, সে কথাও তাঁর জানা ছিল। তাঁর অবিলম্বে কার্ডিয়াক হাসপাতালে গমন এবং এনজিওপ্লাস্টি হওয়ায় সেযাত্রায় জীবন বাঁচল। দুই বছর হলো। জয়ন্ত সেন অবশ্য এখন সুস্থ। তবে তিনি সচেতন ছিলেন এবং ভাগ্যবানও বটে। এ জন্য তিনি বাঁচলেন। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মুখোমুখি হয়েও সচেতন থাকার জন্য ও ত্বরিত চিকিৎসার জন্য প্রাণ বাঁচল। সময়মতো চিকিৎসা না পেলে পরিণতি অন্য রকম হতে পারত।
আরেকজন তরুণের কথা বলি। রিয়াজ পারভেজ (ছদ্মনাম)। মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ একটি ওষুধ কোম্পানিতে। বয়স ২৫। নতুন ঢুকেছেন চাকরিতে। ্নার্ট তরুণ। হৃদরোগের শিকার হলেন তিনি। সব সময় সুস্থ, হৃদরোগের কোনোই ইতিহাস নেই। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন, গ্যাস ও অ্ল হওয়ার সমস্যা হতে পারে। কয়েক ঘণ্টা পর উপসর্গ প্রশমিত হলো। ইতিমধ্যে সহকর্মীরা তাঁকে কার্ডিয়াক সেন্টারে নিয়ে গেছেন। তিনি বুঝলেন, হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল বটে। পরে আরও যা জানা গেল, তা সুখকর নয়।
হৃৎপিণ্ডে বড় সমস্যাই আছে। হৃৎপিণ্ডের কর্মক্ষমতার শতকরা ২০ ভাগ অবশিষ্ট আছে। চিকিৎসা জরুরি। উন্নত দেশে গিয়েছিলেন। সেখানকার চিকিৎসকেরা যে চিকিৎসার কথা বলেছেন, এতে যা খরচ হবে তা তাঁর সাধ্যের বাইরে। পত্রিকায় জনগণের কাছে এ জন্য আবেদন করা হয়েছে। তবে এতে চিকিৎসার খরচ উঠবে কি না, এ নিয়ে সন্দেহ তো আছেই।
তাই হৃদ্‌বান্ধব জীবন যাপন চাই, কম বয়স থেকেই।
যথাযথ খাদ্য খাওয়া; চর্বি, লবণ, তেল, চিনি পরিহার করা; ফল, শাক, সবজি, আটা, লাল চাল, মাছ খাওয়া; নিয়মিত ব্যায়াম, হেলথ চেকআপ, সক্রিয় থাকা-এসব অভ্যাস শুরু করা উচিত তরুণ বয়স থেকেই। ফাস্টফুড ও কোমল পানীয়, মিষ্টি ও নোনতা খাবার যত কম খাওয়া যাবে ততই তা হৃৎ-অনুকূল হবে।

Related posts

Leave a Comment