নিউমোনিয়া কি
নিউমোনিয়া হলো ফুসফুসের প্রদাহজনিত একটি রোগ। সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক সংক্রমনের কারণে নিউমোনিয়া হয়। নিউমোনিয়া মৃদু বা হাল্কা থেকে জীবন হানিকরও হতে পারে। নিউমোনিয়ার ফলে ফ্লু এর সম্ভাবনাও দেখা দিতে পারে।
নিউমোনিয়া হয়েছে কি করে বুঝবেন
নিউমোনিয়ার উপসর্গগুলো ভিন্ন হয়ে থাকে। এটা নির্ভর করে শারীরিক অবস্থা কি ধরনের জীবাণু নিউমোনিয়ার সংক্রমণ ঘটিয়েছে তার উপর।
নিউমোনিয়া হলে সাধারণত: যেসব লক্ষণ ও উপসর্গগুলো দেখা দেয়:
- জ্বর
- কাশি
- শ্বাস কষ্ট
- ঘাম হওয়া
- কাঁপুনি
- বুকে ব্যাথা যা শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে উঠা নামা করে
- মাথা ব্যথা
- মাংসপেশীতে ব্যাথা
- ক্লান্তি অনুভব করা
- অস্বাভাবিক জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ঘাম, বুকে ব্যথা হওয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
- এছাড়া
- যারা বৃদ্ধ এবং শিশু
- যারা ধূমপান করেন
- যারা ফুসফুসে কোন আঘাত পেয়েছেন
- যাদের কেমোথেরাপি (ক্যান্সারের চিকিৎসা) অথবা অন্য কোন ঔষধ খাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে
তাদের যদি উপরোক্ত লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে তাদেরকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। তা না হলে নিউমোনিয়া মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে
চিকিৎসার জন্য কোথায় যোগাযোগ করতে হবে
- ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র
- উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
- জেলা হাসপাতাল
- মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
- বেসরকারী হাসপাতাল
কি ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে
- শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা
- বুকের এক্স-রে
- রক্ত এবং কফ/শ্লেষ্মা (Mucus) পরীক্ষা
মারাত্মক নিউমোনিয়া হয়ে থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে শিরাপথে এ্যান্টিবায়োটিক এবং অক্সিজেন দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অক্সিজেনের প্রয়োজন না হলে বাড়িতে থেকেও মুখে এ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা যেতে পারে তবে এক্ষেত্রে বাড়িতে ভালোভাবে রোগীর প্রতি যত্ন নিতে হবে।
- এন্টিবায়োটিক ঔষধ সেবন
- ভাইরাস প্রতিরোধী ঔষধ সেবন
- পর্যাপ্ত পরিমান বিশ্রাম
- তরল খাদ্য গ্রহণ
- জ্বর এবং ব্যথা কমানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবনের পাশাপাশি নিয়মিত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
- প্রচুর বিশ্রাম গ্রহণ করতে হবে
- প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার গ্রহণ এবং পানি পান করতে হবে
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঠিকমত ঔষধ সেবন করতে হবে
- ডাক্তারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতে হবে
নিউমোনিয়া কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়
- ভালোভাবে পরিস্কার করে হাত ধুতে হবে
- নিজের প্রতি যত্ন নিতে হবে
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে
- সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে
- ধূমপান করা যাবে না
- অন্যের সামনে হাঁচি/কাশি দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। হাঁচি/কাশি দেয়ার সময় মুখ হাত দিয়ে ঢাকতে হবে বা রুমাল ব্যবহার করতে হবে
কিছু কমন জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন .১. নিউমোনিয়া কেন হয় ?
উত্তর. ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস দ্বারা ফুসফুসে সংক্রমণের মাধ্যমে নিউমোনিয়া হয়ে থাকে।
প্রশ্ন.২. নিউমোনিয়া কয় ধরনের হয়ে থাকে?
উত্তর. নিউমোনিয়ার কারণের উপর ভিত্তি করে নিউমোনিয়াকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়।
- পারস্পরিক সংস্পর্শ থেকে (Community-acquired Pneumonia) হওয়া নিউমোনিয়া
- হাসপাতাল থেকে হওয়া নিউমোনিয়া (Hospital-acquired Pneumonia)
- এ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়া(Aspiration Pneumonia)
- সুযোগ সন্ধানী জীবানু দিয়ে হওয়া নিউমোনিয়া (Pneumonia Caused by Opportunistic Organisms)
- অন্যান্য জীবাণু দ্বারা ঘটিত হওয়া নিউমোনিয়া (Other Pathogens)
প্রশ্ন. ৩. কাদের নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি রয়েছে ?
উত্তর. যাদের নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তারা হলেন
- ছোট্ট শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা
- বহুদিন ধরে ভুগছে এমন কোন রোগ থাকলে যেমন : বহুমূত্র (Diabetes), হৃদরোগ, ফুসফুসের অন্য কোন রোগ ,এইডস ইত্যাদি থাকলে
- যাদের অন্য কোন কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে যেমন-ক্যান্সারের চিকিৎসা নিলে,স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবন করলে
- যারা ধূমপান করেন
প্রশ্ন .৩. নিউমোনিয়া হলে কি ধরণের জটিলতা দেখা দিতে পারে?
উত্তর. নিউমোনিয়ার ফলে নিচের জটিলতাগুলো দেখা দিতে পারে:
- রক্তপ্রবাহে (Blood Stream) জীবাণুর সংক্রমণ
- ফুসফুসের চারপাশে তরল জমা এবং সংক্রমণ (Fluid accumulation and indection around lungs)
- ল্যাং এ্যাবসেস (Long Abscess)
- তীব্র শ্বাসকষ্ট বা একিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনেড্রাম (Acute respiratory distress syndrome)
এ সংক্রান্ত যে কোন প্রশ্ন করতে পারেন সাস্থাবাংলার প্রস্ন-উত্তর বিভাগে।
ধন্যবাদ
ডা. রায়হান কবীর খান